ক্যাটাগরি

দিনে শ্রমিক, রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাত ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’: র‌্যাব

ঢাকার সাভার থেকে চক্রটির ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি নৈশ্যপ্রহরী, গুদাম কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকদের যোগসাজশে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’ সারা দেশে ডাকাতি করে আসছিল।

“রাতভর ডাকাতি শেষে দিনের বেলায় এ বাহিনীর সদস্যরা যার যার কাজে ফিরে যেত। সবশেষ তারা বগুড়ার শেরপুরে মহাসড়কে ডাকাতি করেছে।”

সাভারের হেমায়েতপুরের একটি ব্যাটারি কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন তারা। তবে তার আগেই শুক্রবার রাতে সাভারের বলিয়ারপুর এলাকা তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কমান্ডার মঈন।

এরা হলেন- শামীম ওরফে সব্দুল (৩০), আনিসুর রহমান ওরফে ঠাণ্ডা (৪৫), সালাউদ্দিন (২৩), ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), সাইফুল ইসলাম (৩৫), জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), সজিব ইসলাম (২৫), জীবন সরকার (৩৪), স্বপন চন্দ্র রায় (২১), মিনহাজুল ইসলাম (২০) এবং মাধব চন্দ্র সরকার (২৬)। তাদের বাড়ি গাইবান্ধা, বগুড়া, জয়পুরহাট ও রংপুর জেলায়।

কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে মঈন বলেন, “এই চক্রের অন্যতম পরিচালক আনিসুর রহমান ঠাণ্ডা ২০০৪ সালে জয়পুরহাটে গরু চুরির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ অপরাধে যুক্ত হয়। এরপর সে শতাধিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা জড়িত হয়।

 “চক্রটির আরেক পরিচালক শামীমের সঙ্গে আনিসুর ঠাণ্ডার পরিচয় হয় ২০১৬ সালে। তারা দুজনেই বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিল।”

কারাগারে থাকার সময়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অপরাধীদের সঙ্গে ওই দুজনের সখ্য গড়ে ওঠে বলে জানান তিনি।

মঈন বলেন, “পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এই ডাকাত দলটি গড়ে তোলে।”

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে ইখতিয়ারউদ্দিন পেশাদার গাড়িচালক। দলের চাহিদা অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন সময় মিনি ট্রাক ও মাইক্রোবাসের যোগান দেন। আর ডাকাতির সময় ইখতিয়ার নিজেই গাড়ি চালান।

“গ্রেপ্তার সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রীপ। ডাকাতির জন্য তালা ভাঙা, দেয়াল ভাঙা, গাড়ির দরজা ভাঙা ও ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব তার। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর ইট ভাটার শ্রমিক, সজীব ও জীবন গার্মেন্টস শ্রমিক এবং স্বপন চন্দ্র পরিবহন শ্রমিক।

“এসব পেশার আড়ালে তারা ডাকাতদলের সঙ্গে যুক্ত থাকত। রাতে ডাকাতি শেষে আবার দিনের বেলায় তারা নিজের কাজে ফিরে যেত।”

এই বাহিনীর ২৫ জন সদস্য রয়েছে দাবি করে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “দলটি অপরাধ জগতে ‘ঠাণ্ডা-শামীম’ বাহিনী নামে পরিচিতি পায়। এ দলের বিশেষত্ব হচ্ছে ডাকাতির আগে টার্গেট এলাকার স্থানীয় অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা খবর নেয়।

“এ ছাড়া পরিবহন শ্রমিক, গুদামের কর্মচারী, নৈশপ্রহরীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা ডাকাতির পরিকল্পনা সাজায়। ডাকাত দলের সদস্য সালাউদ্দীন, মিনহাজুল ও মাধবচন্দ্রের কাজই হচ্ছে ডাকাতির আগে তথ্য সংগ্রহ করা।”

র‌্যাব জানায়, তথ্য পাওয়ার পর সার্বিক বিচার-বিবেচনা করে আনিসুর ঠাণ্ডা, শামীম এবং সালাউদ্দিন একত্রে বসে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে।

“কীভাবে ডাকাতি হবে, ডাকাতির মালামাল কোথায়, কখন, কীভাবে পরিবহন, সংরক্ষণ এবং কার কাছে বিক্রি করা হবে- ইত্যাদি পরিকল্পনা করত। এ ছাড়া ডাকাতিতে সাহায্যকারী স্থানীয় অপরাধীদের ভাগও দিত তারা।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “কুমিল্লা, গাজীপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, সাভার ও টাঙ্গাইলে চক্রটি বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে গুদামেও ডাকাতি করেছে।

“সড়কে গাছ কেটে বাস ডাকাতি, গরুবাহী ও মালবাহী ট্রাকেও ডাকাতি করেছে। ডাকাতির জন্য পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানের কাছে তাদের একটি দল অবস্থান নিত। তারাই টার্গেট করা যানবাহনের তথ্য দিত।”

দলটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপরও নজরদারি করত বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

তার ভাষ্য, “এভাবে তারা মূল দলকে তথ্য দিত। আর গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই ডাকাত দলের মধ্যে গাছ কাটার দায়িত্বপ্রাপ্তরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তা আটকে দিত। এরপর অন্যরা চটজলদি অস্ত্রের মুখে যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের জিম্মি করে সব লুটে নেয়ে।”

যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকে না সেখানে তারা চালকের চোখে আলো ফেলে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেছে বলে জানান তিনি।

আল মঈন জানান, ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে সাতটি ও শামীমের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার হদিস পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশ সদস্যদের নামেই একাধিক ডাকাতি ও অপহরণের মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান, দুটি ওয়ান শ্যুটার গান, একটি ম্যাগজিন, ছয় রাউন্ড গুলিসহ বেশ কিছু ধারাল দেশিয় অস্ত্র, শাবল, কুড়াল, লেজার লাইট, হ্যাক্সো ব্লেড, হাউজ কাটারসহ ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে  বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

দীর্ঘদিন ধরে তারা ডাকাতি করলেও তেমন অর্থ-সম্পদ তাদের নেই বলে জানান কমান্ডার আল মঈন।

“ডাকাতিলব্ধ অর্থ সদস্যদের মাধ্যমে বণ্টন করা, মামলা চালানো এসব কাজে তাদের অনেক খরচ হয়। তাদের আহমরি অর্থ সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, গত রোজার ঈদের আগে র‌্যাব বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহাসড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।

“কোরবানির ঈদের আগে সড়কে ডাকাত চক্র সক্রিয় হয়। এখন মহাসড়কে ডাকাতি একটি আলোচিত ইস্যুও বটে।”

এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।