শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সেতুর মাওয়া প্রান্তে জ্বালানো হয় ২৪টি বাতি। সেই মুহূর্তে সেতুকর্মীদের মধ্যে বিশেষ আবেগ-উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, “এই প্রথম সেতু আলোকিত হল। এর আগে বাতিগুলো স্থাপন করা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।”
সেতুর ১২ নম্বর স্প্যানের বাতিগুলোর পশ্চিম পাশে প্রথমে, এরপর পূর্ব পাশের বাতিগুলো জ্বালানো হয়।
প্রকৌশলীরা জানান, বাতি ও তার এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, কখনও কোনো বাতি বা তার বিকল হলে বিকল্প লাইনে বাতি জ্বলবে।
গত বছর ২৫ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ল্যাম্পপোস্ট বসানো শুরু হয় জানিয়ে প্রকৌশলীরা বলেন, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে রয়েছে ৩২৮টি। এর বাইরে জাজিরা প্রান্তে ৪৬টি আর মাওয়া প্রান্তে আছে ৪১টি। সব ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বাকি রয়েছে।
বাতি জ্বালানোর পর সন্ধ্যায় আশপাশের মানুষ ভিড় জমায় সেতু এলাকায়। তারা দূর থেকে পদ্মা সেতুর আলো দেখে অভিভূত।
আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধন করবেন। জমকালো উদ্বোধনের লক্ষ্যে সরকারের তরফে চলছে বিপুল তোড়জোড়। অপেক্ষায় আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।
প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর ল্যাম্প পোস্টে তার সংযোগ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এখন চলছে ল্যাম্পপোস্টের প্যানেল বক্সে সংযোগের কাজ। ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টের জন্য সেতুতে আটটি প্যানেল বক্স রয়েছে। সেতু থেকে দুই প্রান্তের নিচে সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। সাবস্টেশন থেকে আটটি প্যানেলে সংযোগ দেওয়ার আগে সব পয়েন্ট শেষবারের মত পরীক্ষা করা হচ্ছে। মাওয়া সাবস্টেশনের বিদ্যুতে মাওয়া থেকে মাঝ পদ্মা অর্থাৎ ২১ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত বাতি জ্বলবে। বাকি অংশে ২১ নম্বর পিয়ার থেকে জাজিরা অংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে জাজিরা সাবস্টেশন থেকে।
সেতু ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুতগতিতে চলছে রেলিং স্থাপনের কাজ। মাওয়া প্রান্ত থেকে তাকালে মূল সেতুর চোখ যত দূর যায় শেষ পর্যন্ত রেলিং। কর্মীরা সেতুর শেষ কাজটি করছেন মুগ্ধ হয়ে। এই রেলিং স্থাপনে সেতুর চেহারা পেয়েছে নতুন রূপ। প্যারাপেট ওয়ালের ওপর ১৫ ইঞ্চি উঁচু অ্যালমুনিয়াম রেলিং সেতুকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে। সেতুর কালো কার্পেটিংয়ের ওপর সাদা রোড মার্কিং ফুটে আছে। আগামী ৭ জুন নাগাদ সেতুর রোড মার্কিং শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
সেতুর দুই প্রান্তে ইলিশের ম্যুরাল স্থাপনের জন্য চলছে নির্মাণকাজ। দুই পারেই নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মার্বেল পাথরের নামফলক আর ম্যুরাল স্থাপনেও সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সেতুর নিচতলায় গ্যাসপাইপের সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন হলদে পাইপের বিভিন্ন স্থানের দাগগুলো পরিষ্কার করছেন কর্মীরা। চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কাজ। মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন-পরবর্তী সুধী সমাবেশ নিয়ে চলছে নানা আয়োজন।