কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী রাশিয়ার পর্যটন
নগরী সোচিতে শুক্রবার এ দু’নেতার মধ্যে বৈঠক হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বৈঠকের পর আফ্রিকান ইউনিয়নের
প্রধান ম্যাকি সাল জানিয়েছেন, পুতিন খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি সহজ করার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন।
সাধারণত আফ্রিকার চাহিদার ৪০
শতাংশেরও বেশি গমের যোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেইন।
মিলিতভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেইন
বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ গম সরবরাহ করে। রাশিয়া প্রধান সার রপ্তানিকারী একটি দেশ এবং ইউক্রেইন
ভূট্টা ও সানফ্লাওয়ার তেলের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারী।
কিন্তু ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধের
কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে। এ যুদ্ধের কারণে দেশ দুটি থেকে সরবরাহ বন্ধ
হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে
আক্রমণ শুরু করার পর কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে দেশটির খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে
যায়। ফলে ইউক্রেইনের সাইলোগুলোতে দুই কোটি টনেরও বেশি খাদ্যশস্য আটকা পড়ে। আর মস্কো
বলছে, এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া নিষেধাজ্ঞায় তাদের
খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে।
যুদ্ধের আগেই রশিয়ার উভচর আক্রমণ
প্রতিহত করতে নিজেদের বন্দরগুলোর প্রবেশ পথে মাইন পেতে রেখেছিল ইউক্রেইন। এখন রাশিয়া
ইউক্রেইনের বন্দরগুলো অবরোধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছে কিইভ ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা।
রাশিয়া ইউক্রেইনীয় বন্দরগুলো
দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন,
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা আজভ ও কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে নিরাপদে ইউক্রেইনের শস্য
রপ্তানি করার নিশ্চিয়তা দিতে প্রস্তুত তারা।
তবে তার মতে এর সবচেয়ে ভালো সমাধান
হল, বেলারুশের পথে ইউক্রেইনের শস্য রপ্তানির পথ খুলতে দেশটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো
তুলে নেওয়া।
জাতিসংঘের সংকট বিষয়ক সমন্বয়ক
আমিন আওয়াদ জেনেভায় বলেছেন, “ওই বন্দরগুলো চালু করা না গেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।”
তিনি জানান, খাদ্যশস্যের ঘাটতি
১৪০ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে আর এতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপক স্রোত
তৈরি হতে পারে।
প্রত্যাশিত ফলন না হওয়ায় ও নিরাপত্তাজনিত
কারণে আফ্রিকায় বিরাজমান খাদ্য ঘাটতির সঙ্গে ইউক্রেইনের যুদ্ধজনিত চাপ যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে
সঙ্গীন করে তুলেছে। ১০০ দিন আগে রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে মহাদেশটিজুড়ে
খাবারের দাম বেড়ে চলছে, এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অনাহারের শিকার হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর প্রধান
মাইক ডানফোর্ড জানান, গত বছর এই সময় আফ্রিকার প্রায় পাঁচ কোটি লোক ক্ষুধার্ত ছিল, কিন্তু
এখন সংখ্যাটি বেড়ে আট কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
ইতোমধ্যে শাদ খাদ্য সংক্রান্ত
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
ম্যাকি সাল (তিনি সেনেগালেরও
প্রেসিডেন্ট) পুতিনকে বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলো ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে হলেও
চলতি অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হচ্ছে।
সাল জানান, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য
ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর পক্ষ হয়েও পুতিনকে খাদ্য রপ্তানির অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
কিছু বিশ্লেষকের ধারণা, বাড়তে
থাকা খাদ্য সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশগুলো থেকে নতুন
অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপমুখি বড় ধরনের স্রোত সৃষ্টি হবে আর তাতে পশ্চিমা দেশগুলো
রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়বে, ক্রেমলিন এমন আশা করে আছে।
ম্যাক সালের সঙ্গে শুক্রবারের
বৈঠকের আগে থেকেই পুতিন বলে আসছেন, তিনি সবসময় আফ্রিকার পাশে আছেন। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে
আফ্রিকার খাদ্য সংকটের কথা উল্লেখ করেননি।
আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সেনেগালও
ইউক্রেইন যুদ্ধকে ঘিরে কোনো পক্ষ নেওয়া এড়িয়ে গেছে। দেশটির নেতা সাল বলেছেন, খাদ্যশস্য
রপ্তানিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা উচিত। গত সপ্তাহে
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলার সময়ও এ বিষয়টি তুলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের জন্য
পশ্চিমা দেশগুলো দায়ী, গত শুক্রবার এমন ধারণা নাকচ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন।
আরও পড়ুন:
‘জয় আমাদের হবেই’, যুদ্ধের শততম দিনের ভিডিওতে জেলেনস্কি
যে কারণে সিঙ্গাপুরবাসীর প্রিয় খাবার হুমকির মুখে
ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধ ১০০ দিনে গড়াল