ক্যাটাগরি

দুর্দিনের শঙ্কায় টেসলার ১০% কর্মী ছাটাইয়ের নির্দেশ মাস্কের

বৃহস্পতিবার টেসলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ইমেইল পাঠিয়ে নিজ শঙ্কার কথা জানিয়ে কর্মী ছাটাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মাস্ক। ইমেইলগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের।

ইমেইলে ‘বিশ্বব্যাপী সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত’ করতে বলেছেন মাস্ক। আন্তর্জাতিক ব্যবসা খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কায় ভুগছেন, এমন সময়েই এলো মাস্কের কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত। 

এর ঠিক দুদিন আগেই সকল টেসলা কর্মীকে সশরীরে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাস্ক। কর্মস্থলে হাজির না থাকলে ওই কর্মী ইস্তফা দিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মাস্ক।

নির্বাহী কর্মকর্তাদের শুক্রবারে পাঠানো ইমেইলে টেসলার বিভিন্ন খাতে বেতনভূক্ত কর্মীর সংখ্যা ‘প্রয়োজনের চেয়ে বেশি’ উল্লেখ করে ১০ শতাংশ কমাতে বলেছেন মাস্ক। একই সঙ্গে ঘণ্টাভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করেন এমন কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন তিনি।

“মনে রাখবেন, এই সিদ্ধান্ত গাড়ির নির্মাণ, ব্যাটারি প্যাক এবং সোলার প্যানের ইনস্টল প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত কর্মীদের ওপর প্রযোজ্য নয়,” ইমেইলে বলেছেন মাস্ক।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২১ সালের শেষে টেসলা এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। তবে, এদের মধ্যে কতোজন বেতনভুক্ত কর্মী আর কতোজন ঘণ্টাভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করেন, সে তথ্য প্রকাশ করেনি টেসলা।

এ প্রসঙ্গে টেক্সাসভিত্তিক কোম্পানিটির কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একাধিকবার বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি নিয়ে মুখ খুলেছেন মাস্ক। কিন্তু, বাজারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ছাটাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি নিয়ে একটি সরাসরি সতর্কবার্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য বার্তাসংস্থাটির।

এ প্রসঙ্গে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনসের মত, “বৈশ্বিক অর্থনীতির ভেতরের খবর জানা আছে মাস্কের। আমরা মনে করি তার কাছ থেকে আসা বার্তা নির্ভরযোগ্যতা বহন করে।”

নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত

মাস্ক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলার আগে টেসলার লিংকডইন প্রোফাইলে প্রায় পাঁচ হাজার পদে নিয়োগের পোস্ট ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স। টোকিওর বিক্রয় বিভাগ, বার্লিনের কারখানার জন্য প্রকৌশলী, এমনকি পালো আল্টোতে এআই গবেষকদের নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছিল টেসলা। ৯ জুন একটি উইচ্যাট চ্যানেলের মাধ্যমে সাংহাইতেও কর্মী নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বের শীর্ষ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি নির্মাতার।

তবে, কর্মীদের সশরীরে কর্মস্থলে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে জার্মানিতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মাস্ক। অন্যদিকে, তার কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেদারল্যান্ডসেও বিরোধীতার মুখে পড়বে বলে রয়টার্সকে বলেছেন এক শ্রমিক ইউনিয়ন মুখপাত্র। টেসলার ইউরোপীয় সদর দপ্তরও নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত।

“আপনি চাইলেই ডাচ কর্মীদের ছাটাই করতে পারেন না,” রয়টার্সকে বলেছেন এফএনভি ইউনিয়নের মুখপাত্র হানস ওয়ালথি। যে কোনো ছাটাই প্রক্রিয়ার জন্য টেসলাকে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মীদের সঙ্গে প্রস্থানের শর্তাবলী ঠিক করে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মাস্ক মঙ্গলবারের এক ইমেইলে কর্মীদের সশরীরে ফেরার নির্দেশ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন মাস্ক। “আপনি যদি না আসেন, আমরা ধরে নেব যে আপনি ইস্তফা দিয়েছেন,” ইমেইলে বলেছিলেন মাস্ক। 

এ প্রসঙ্গে প্রযুক্তির খাতের ট্যালেন্ট এজেন্সি ‘ক্যাডার’-এর প্রতিষ্ঠাতা জেসন স্টোমেলের মত, অফিসে ফেরার নির্দেশটি দিয়ে সম্ভবত কর্মীদের পরোক্ষভাবে ইস্তফা দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন মাস্ক।

“মাস্ক জানেন যে কিছু কর্মী অফিসে ফিরবেন না।” এতে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সুবিধা দিতে হবে না টেসলাকে, প্রতিষ্ঠানটির জন্য যা কৌশলগতভাবে সস্তা হবে। 

মাস্ক বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা নিয়ে কথা বলছেন বেশ কিছু দিন ধরেই। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মায়ামিতে আয়োজিত এক প্রযুক্তি সম্মেলনে টেসলা প্রধান বলেছিলেন, “আমরা সম্ভবত একটা মন্দার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি এবং মন্দা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

এখনও বাজারে টেসলা ও অন্যান্য বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদায় ভাটা পড়েনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে, কোভিড-১৯ লকডাউনের জেরে সাংহাইয়ের কারখানায় নতুন করে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু করতে বেগ পেতে হচ্ছে টেসলাকে। অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতায় আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

মাস্কের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অন্যতম নর্ডএলবির বিশ্লেষক ফ্র্যাঙ্ক শোপে বলেন, “খারাপ সময়ের চেয়ে ভালো সময়ে মিতব্যয়ী হওয়াই শ্রেয়। আমি এই বক্তব্যগুলোকে আগেইভাগেই সতর্ক হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।”

মাস্কের শঙ্কা বহুজাতিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক জেপি মর্গ্যান অ্যান্ড চেস অ্যান্ড কো-এর প্রধান নির্বাহী জেমি ডায়মন এবং গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর প্রেসিডেন্ট জন ওয়াল্ড্রনের বক্তব্যেও প্রতিফলিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

“বাইরে একটা হারিকেন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে,” মে মাসের শেষ সপ্তাহেই বলেছেন ডায়মন।

টেসলা নিয়ে মাস্কের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর কোনো প্রভাব টুইটার অধিগ্রহণ চুক্তির ওপর পড়বে কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবারের চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টিট্রাস্ট পর্যবেক্ষক কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই টুইটার শেয়ারের দাম বেড়েছে দুই শতাংশ।