আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে, শনিবার রাতে আগুন লাগার পর থেকে সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য সেখানে নিয়োজিত রয়েছেন।
“উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার এবং নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে এ দলটি কাজ করছে।”
ডিপো এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিলিটারি পুলিশ সেখানে নিয়োজিত রয়েছে। বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম। ফায়ার সার্ভিসের ১৪ জন সদস্যসহ ১৫ জনকে চট্টগ্রাম সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বিএম টার্মিনাল ডিপোতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে। পরে রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সকালে ডিপোতে এসে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো আশরাফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, “ডিপোতে ড্রেন আছে, সেই ড্রেন হয়ে মদনহাট খালে গেছে, সেই খাল আবার সাগরের সাথে সংযোগ আছে। রাসায়নিক যাতে সাগরে না যায় সে লক্ষ্যে উনারা কাজ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।”
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে লাগা আগুনে শত শত কন্টেইনার পুড়েছে। রাসায়নিক থাকায় দফায় দফায় বিস্ফোরণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। ছবি: সুমন বাবু
সেনাবাহিনীর ১ ইঞ্জিনিয়ার কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিরা সুলতানা বলেন, “সমুদ্রে যাতে রাসায়নিক না যায়, সেটা প্রটেক্ট করাই এখন আমাদের মূল কাজ। সে লক্ষে কাজ চলছে। কিন্তু কয়টা কন্টেইনারে রাসায়নিক ছিল তা এখনো জানা যায়নি।”
রোবাবর কন্টেইনার ডিপোর ধ্বংসস্তূপে নীল রঙের বেশ কিছু প্লাস্টিকের জার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু জার গলে গেছে, আবার কোনোটি ফেটে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।
জারের ওপর স্টিকারে বড় করে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ৬০%’। ৩০ কেজির ওই জারের স্টিকারেই লেখা রয়েছে ‘দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এবং তাপ পেলে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে’।
একটি জারে উৎপাদনের তারিখ রয়েছে ২৮ এপ্রিল ২০২২। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৩। জারের স্টিাকারে লেখা উৎপাদক কোম্পানির নাম আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্স।
ওই কন্টেইনার ডিপোর এক কর্মতকর্তা বলেন, রাসায়নিকগুলো রপ্তানির জন্য সেখানে রাখা হয়েছিল। বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্সেরও একজন উদ্যোক্তা। তারা মূলত কাঁচামাল আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করার পর জারে ভরে আবার রপ্তানি করেন।
আল রাজী রাসায়নিক কমপ্লেক্সের মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।
রাসায়নিকগুলো প্রটোকল অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না বা সেগুলোর আইনগত অনুমোদন রয়েছে কি না- জানতে চাইলে শামসুল হায়দার বলেন, “আমিও এগুলো এখনও ঠিকমত জানি না। এই প্রশ্নগুলো আমারও।
“এগুলো ঠিকমতো রাখা হয়েছিল কি না, এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ কী না- এসব তথ্য জানাতে বলেছি স্টাফদের। এরপর আমরা সংবাদ মাধ্যমকে জানাব।”