এমন
প্রেক্ষাপটে একদিনের ব্যবধানেই রাজধানীর খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে কমপক্ষে পাঁচ
টাকা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার
সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করা ডলার সন্ধ্যায় কোনো কোনো মানি এক্সচেঞ্জ ও খুচরায় ডলার বিক্রেতারা
১০২ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করেছেন; এতটা দর এর আগে দেখা যায়নি।
আর
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এদিন ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৭ টাকায়
বিক্রি হওয়ার তথ্য মিলেছে।
মুদ্রা
বাজারের অস্থিরতা সামাল দিতে একদিন আগেই দুই মাসে তৃতীয়বারের মত ডলারের বিপরীতে টাকার
মান কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এক ধাক্কায় ৮০ পয়সা কমে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময়
হার করা হয় ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
এর
একদিন পরেই খোলা বাজারে এক লাফে দাম বাড়ল পাঁচ টাকা। আগের দিন সোমবারও এ বাজারে (কার্ব
মার্কেট) ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৭ টাকা। মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে
দিন শেষে ১০২ টাকায় পৌঁছেছে।
ডলার
হাতবদলের সবচেয়ে বড় স্থান মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন ও গুলশান-১ এলকার মানি এক্সচেঞ্জ
প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।
ঢাকার
পল্টনে ইউনিক মানিচেঞ্জার সার্ভিসেসের বিক্রয়কর্মী মো. আনিসুর রহমান বলেন, “সকালে ডলার
রেট ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা ছিল। দুপুর ২টার দিকে তা বেড়ে ৯৮ টাকা হয়। কিন্তু তখন ডলার কয়েকজনের
কাছে শেষ হয়ে যায়। পড়ে বিকেলের দিকে ১০২ টাকায় বিক্রি হয়।“
পল্টন
এলাকার বায়তুল মোকাররম মার্কেটের বিপরীতে একই জায়গায় ডজন খানেক মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির
অফিস। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনের ব্যক্তিগতভাবে অনেকে কাগুজে ডলার বিক্রি করে থাকেন।
বেলা
সোয়া দুইটার সময়ে এখানকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে ডলার
নেই। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন তারা।
বেলা
চারটার দিকে কথা হয় বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনে রাজধানী মতিঝিলের একটি বেসরকারি ব্যাংকে
ডলার কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তিনি
বলেন, “দুই হাজার ডলার চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যংক বলল আজ নেই। খোলাবাজারে কিনতে এসে দেখি
ব্যাংকের চেয়েও বেশি। তাই আগামীকাল (বুধবার) আবার এসে দেখব।’’
ফের কমানো হল টাকার মান, ডলারের বাজার লাগামহীন
পল্টনের
ওয়েস্টার্ন মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয়কর্মী মো. আমিন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
সন্ধ্যায় বলেন, “সকালে ৯৮ টাকায় বিক্রি করি। পরে দুপুরে ১০১ টাকায় কিনে ১০২ টাকাতেও
বিক্রি করি। এর কিছুটা সময় পরই তা শেষ হয়ে যায়।
“পাশের
কয়েক জনের কাছেও ডলার শেষ হয়ে যেতে শুরু করে। তখন ডলার বেচা বন্ধ রাখি। কেনাও বন্ধ
করি। কারণ বেশি দামে কিনলে তো পরে লোকসান হইতে পারে।“
তিনি
জানান, পরে বিকালে আবার বেশ কিছু ডলার পাওয়া যাওয়ায় সেগুলো ৯৯ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
“আজ
দাম উঠানামা করছে বেশি, মার্কেট বুঝা মুশকিল,” যোগ করেন তিনি।
মতিঝিল
এলাকায় ব্যাংকের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ‘ডলার আছে’ বলে ক্রেতা খুঁজে বেড়ানো জসিম উদ্দিন
বলেন, “আগে সবাইরে বলতে পারতাম যত লাগবে দিতে পারুম। এহন আগে জিগাই কত লাগবো। ডলারের
সেই রকম আমদানি (সরবরাহ) নাই। তাই রেট বেশি। আজ ৩টা পর্যন্ত ১০০ টাকা বেচছি। এরপর আর
ডলারই পাইনি।”
খোলাবাজারে
ডলারের উৎস হচ্ছে মূলত বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মী ও পর্যটক। সঙ্গে করে নিয়ে আসা ডলার
তারা বিক্রি করে দেন মানি চেঞ্জারগুলোর কাছে। আবার বিদেশগামীরা প্রয়োজনে ডলার কিনে
নেন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে।
এখন
প্রবাস ফেরত ও বিদেশি পর্যটকদের থেকে তেমন ডলার মিলছে না। অন্যদিকে ভ্রমণ, কেনাকাটা,
শিক্ষা ব্যয়, চিকিৎসাসহ সব ধরনের বিদেশগামী দেশি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এসব কারণে
খোলা বাজারে ডলারের সরবরাহ কমেছে বলে জানিয়েছেন মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয় কর্মীরা।
গুলশান-১
এর মর্জিনা মানি এক্সেচেঞ্জের কর্মী গোলাম ফারুক বলেন, “মানুষ এখন ডলার কিনতে আসে
বেশি। আগে যেভাবে বিদেশি দেখা যেত, এখন নেই। আবার কার্ডে কেনাকাটা করার সুযোগ থাকায়
এখন কাগুজে ডলার কম আসছে।’’
এদিকে
ব্যাংকগুলোও নগদ টাকায় ডলার বিক্রির বিনিময় হার বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯২ টাকায়
ডলার বিক্রি করেছে। গত ১২ মে এ দর ছিল ৯০ টাকা।
এদিন
ইস্টার্ন ব্যাংকের বিক্রির দর ছিল সর্বোচ্চ ৯৬ টাকা। সোমবারও ব্যাংকটি নগদ ডলার বিক্রি
করেছিল ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়।
একদিনের
ব্যবধানে বিক্রিতে সাড়ে তিন টাকা দর বাড়িয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মঙ্গলবার সর্বোচ্চ
৯৯ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে।