চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম
উদ্দিন বৃহস্পতিবার আসমিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন: চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের মো.
ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকত, সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও
হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন
বিচারকের ব্যস্ততার কারণে তা পিছিয়ে নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। কিন্তু এক
আসামি শিশু আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে রায় পিছিয়ে যায়।
সেই আবেদন নাকচ করে বিচারক তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে
বুধবার রায় দিয়েছেন বলে জানান এ আদালতের এপিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত
হওয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নিষ্পাপ শিশুটির
পরিবারের সাথে খুনিদের কোনো বিরোধ ছিল না। শুধুমাত্র অন্য দুজন কমিশনারের
(কাউন্সিলরের) বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।”
রায় ঘোষণার পর আরাফের বাবা আবদুল কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “রায়ে আমি সন্তুষ্ট। দ্রুত মামলার বিচার কাজ হয়েছে। শুরু থেকে তদন্তকারী ও আইনজীবীসহ
সবার সহযোগিতা আমি পেয়েছি।
“আমার অবুঝ শিশুটিকে হারিয়ে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। রায়ে আমরা
সান্তনা পেলাম। আশা করি উচ্চ আদালতেও এই সাজা বহাল থাকবে।”
রায় ঘোষণার পর আদালতে তিন আসামির স্বজনদের কান্নাকাটি করতে
দেখা যায়। তবে আসামিরা ছিলেন নির্বিকার।
আবদুর রহমান আরাফ
২০২০ সালের ৬ জুন বিকালে নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের
ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় শিশু আরাফকে।
ওই ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ,
শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা
নাজমা বেগমকে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ঘটনার দিন বিকালে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল
শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা
ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে যান।
তিনি ফিরে এসে দেখেন ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে
ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান
ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
তখন নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার
করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে
ফেলে হত্যা করেন।
নাজমা জবানবন্দি বলেছিলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে
পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ
ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে
সহায়তা করেছিলেন।
১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর
প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই
ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ।
ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে
কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে
আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।
একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম
ও গৃহিনী ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আরাফ।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জনের সাক্ষ্য এবং আসামি পক্ষে ১০ জনের সাফাই
সাক্ষ্য শেষে বুধবার রায় ঘোষণা হল।
পুরনো খবর
শিশু আরাফ হত্যা: ডিএনএ পরীক্ষার আবেদনে ফের পেছাল রায়