ক্যাটাগরি

বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা: দুজন গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার দুজন হলেন, মনসুর আহমেদ (৩৩) ও মো. মহসিন চৌধুরী (৫৫)। মঙ্গলবার রাতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র‍্যাব-৩ রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

বুধবার কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ও পরিচয় ভাঙিয়ে এবং সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে একটি চক্র বিভিন্ন ঠিকাদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে বলে সম্প্রতি জানতে পারে এনএসআই।

“চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে তারা কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।”

কমান্ডার আল মঈন বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রে ৫ থেকে ৭ জন সদস্য রয়েছে এবং তাদের হোতা মুনসুর।”

তিনি বলেন, মনসুর এক সময় জমির দালালি করতেন। পরে ঢাকায় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। ওই কোম্পানির এক কর্মচারীর মাধ্যমে সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি প্রতারণার এই চক্র গড়ে তোলেন।

আর সাইফুল আগে ঢাকার মালিবাগে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে তার কারখানা বিক্রি করে দিতে হয়। পরে তিনি মনসুরের চক্রে যুক্ত হন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, “চক্রটি গত ৩-৪ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা প্রতারণার জন্য নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করত।

“প্রথমত, তারা নতুন মোবাইল সিম কিনে সেখানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামে সেইভ করত। ওই পরিচয় দিয়ে চক্রের সদস্যদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চ্যাট করত। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হত তাদের আলোচনায়।

“চ্যাটের কনটেন্ট তারা এমনভাবে তৈরি করত, যাতে যে কোনো ঠিকাদারী কোম্পানি মনে করে যে, তারা ইতোপূর্বে অনেক কাজ অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দিয়েছে এবং তাদের বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে।”

আল মঈন বলেন, সাইফুল নামে এই চক্রের একজন সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। নিজেকে তিনি ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি’ পরিচয় দিতেন এবং সেখানে বসে (বাংলাদেশ) সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেপ্তার দুজন।

“তারা সরকারি কোনো চলমান প্রকল্পের কাজ পাওয়ার যোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করে তাদেরকে ১০ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে ওই কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাত। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে পূর্ব নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাড়া করা অফিসে মিটিং করত। অথবা নিজেরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিসে যেত।

“বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ছবি আগ্রহী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তারা দেখাত এবং নিজেদের কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টিও দেখাত। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে করা ভুয়া চুক্তিপত্র, ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাত।”

প্রতারক চক্রটি তিতাস নদী ড্রেজিং, আড়িয়াল খাঁ নদী ড্রেজিং ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প, ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ড্রেনের সংস্কার কাজ, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিস কনস্ট্রাকশনের কাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজসহ প্রভৃতি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণার পরিকল্পনা করছিল বলে জানান র‌্যাবের মুখপাত্র।

মনসুর ও মহসিনকে পরে পল্টন থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। তাদের মাত দিনের জন্য রিমান্ডে চেয়ে পুলিশ আবেদন করলেও মহানগর হাকিম আশেক ইমাম দুদিন রিমান্ডের আদেশ দেন।