ক্যাটাগরি

এক ভবনের জন্য এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের অভিযোগ

‘লংগদু কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি’র ওই ভবন নির্মাণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের টেন্ডারের ঘটনাকে ‘সমন্বয়হীনতার ফল’ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি ‘লংগদু কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি’ তথ্য গোপন করে দুটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী।

জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল ‘কন্সট্রাকশন অব কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি অফিস অ্যাট লংগদু উপজেলা’ নামে একটি টেন্ডার আহ্বান করে পাহাড়ের উন্নয়ন সংস্থা পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ। ২৬ এপ্রিল ছিল টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এতে ১ মে থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় আনুমানিক ১০ লাখ টাকা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার তথ্য আছে ওটিএম-এ করা এই টেন্ডারে। সেই অনুযায়ী, একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

এর ঠিক এক মাস পরেই ৯ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘লংগদু উড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফিস বিল্ডিং’ এর টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করে; যার প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। মাত্র একদিন সময় দিয়ে এই টেন্ডার জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১০ মে।

টেন্ডারে জুনের ১ তারিখ কাজ শুরু করে ২৯ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের বরাদ্দও দেওয়া হয়।

তবে, যে জায়গায় ভবনটি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, সেই জায়গাটিকে নিজের বলে দাবি করেন সুকেশ চাকমা পল্টু। তিনি জেলা পরিষদে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। তারপরই ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত করে জেলা পরিষদ। 

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “এটা কী করে সম্ভব? এমনটা সচরাচর হয় না। সম্ভবত এই সংগঠন একই সময়ে দুই জায়গায় ভবন তৈরির আবেদন করায় এই জটিলতা হয়েছে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এর কারণ।”

“আর এরই মধ্যে আমরা কাজটি স্থগিত করেছি। কারণ, জায়গাটি নিজের দাবি করে একজন অভিযোগ দিয়েছেন। এতে জটিলতা হওয়াতেই কাজ স্থগিত করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাহী প্রকৌশলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, ফলে আমরা এখন তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

“একই কাজ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। একটি প্রতিষ্ঠান গিয়ে যদি দেখে, সেখানে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাহলে তারা আর কাজ করবে না। সেই টেন্ডার তারা স্বাভাবিকভাবেই বাতিল করবে।” 

অপরদিকে টেন্ডারকারী আরেক প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা বলেন, “আমরা তো জানি না যে, উনারা (লংগদু কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি) অন্য কোথাও আবেদন করেছেন। আমরা তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে টেন্ডারে দিয়েছি।”

এমনটা হওয়া উচিত নয় এবং এতে সমন্বয়হীনতা রয়েছে স্বীকার করে প্রকৌশলী বলেন, “প্রকল্প গ্রহণের আগে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি।”

এই প্রকল্পটির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই পদক্ষেপ নিবেন বলে জানালেন প্রকৌশলী।

লংগদু কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সাদেক বলেন, “আমরা দুই প্রতিষ্ঠানের কাছেই আবেদন করেছিলাম। কাদেরটা অনুমোদন হয়েছে কিংবা টেন্ডারে গিয়েছে, সেটা আমি জানি না।”

টেন্ডারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কথা বললেন বলে আশ্বাস দিলেও পরে ফোন করলে আর রিসিভ করেননি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এই সভাপতি।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) রাঙামাটি জেলার সভাপতি ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও পাহাড়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারাই যদি সমন্বয়হীনতার মধ্যে থাকে সেটা পার্বত্যবাসীর জন্য দুর্ভাগ্যের। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এই ধরনের সমন্বয়হীনতা এড়াতে তারা সতর্ক থাকবেন।“