বুধবার
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ
দিয়েছেন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম শহিদুল ইসলাম।
এছাড়া
নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তিনি।
তার
অভিযোগ গত ১২ মে বিভাগের জার্নাল কমিটির এক সভায় প্রবন্ধ প্রকাশ নিয়ে বাদানুবাদের এক
পর্যায়ে অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ‘গালি’ ও ‘হুমকি’ দেন।
উপাচার্যের
কাছে অভিযোগ দেওয়ার আগে মঙ্গলবার বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা ডেকে অধ্যাপক মিজানুরের
বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান।
অভিযোগের
বিষয়ে অধ্যাপক মিজানুরের দাবি, জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ নিয়ে অধ্যাপক শহিদুলের সঙ্গে
উচ্চবাক্যে তার বাদানুবাদ হয়েছিল। কিন্তু খুনের হুমকি বা তেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ
পত্রে যা বলা হয়েছে তা ‘অতিরঞ্জিত’।
গত
১২ মে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে জার্নালের সম্পাদক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক
হরিপদ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে জার্নাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জার্নালের সহকারী
সম্পাদক অধ্যাপক সমীর কুমার শীল এবং সদস্য অধ্যাপক শহিদুল, অধ্যাপক মিজানুর ও অধ্যাপক
মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এ
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্পাদকীয় পর্ষদের আগের সিদ্ধান্ত ছিল- জার্নালে
১১টি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হবে। তবে ১২ মে এর বৈঠকে অধ্যাপক ইসমাইল ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন
করেন। যে প্রবন্ধটি উত্থাপন করা হয়নি, তা একজন নারী সহকর্মীর এবং এটির রিভিউয়ার ছিলেন
অধ্যাপক শহীদুল। সভায় ওই প্রবন্ধ প্রকাশ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক শহিদুল।
কেন
ওই প্রবন্ধ প্রকাশ করা যাবে না- কমিটির দুই সদস্য শহীদুল ও মিজানুরের মধ্যে বাদানুবাদ
হয়।
এ
বিষয়ে জার্নালের সম্পাদক অধ্যাপক হরিপদকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে
কমিটির সহকারী সম্পাদক অধ্যাপক সমীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুজনই দুজনকে
গালাগালি করেছেন। একটা আর্টিকেল নিয়ে মতানৈক্য হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে অধ্যাপক
মিজানুর রহমান ওই দিনই অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চান। কেননা মিজানুর রহমান
অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের ছাত্র ছিলেন। বিষয়টি কিন্তু ওই দিনই মিটমাট হয়ে গিয়েছিল।
“এরপর
আমরা আমাদের মত কাজ করতে থাকলাম। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা দেখলাম আমাদের চেয়ারম্যান বিভাগের
একাধিক মিটিং ডাকলেন। উপাচার্য বরাবর নালিশ দিলেন। গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের সর্বজন
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক অধ্যাপক মিজানুর রহমান স্যারকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিভাগের সকল শিক্ষকদের সামনে ক্ষমা চাইতে রাজি হন। কিন্তু অধ্যাপক
শহিদুল ইসলাম বললেন উনি ক্ষমা করবেন না।”
অধ্যাপক
শহীদুল অভিযোগপত্রে বলেন, “অধ্যাপক মিজান যে আর্টিকেলটির কথা বলে সেটি মান সম্মত না
হওয়ায় রিভিউয়ার কর্তৃক রিজেক্টেড হয়। তবুও জিজ্ঞাসার সুরে আমি বলি, ‘জার্নাল কমিটির
আগের সভায় অধ্যাপক সমীর কুমার শীল একটা আর্টিকেলের বিষয়ে বলেছিলেন আর্টিকেলটা এই
ইস্যুতে যাবে না, মান সম্মত হলে পরের ইস্যুতে যাবে। তাহলে কি সেই কারণে অফিস ইসমাইলের
কাছে আর্টিকেলটি পাঠায়নি?
“আমি
এ কথা বলার সাথে সাথে অধ্যাপক মিজান দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে, সমীর বললেই হবে?
সমীর একজন মেম্বার মাত্র। আমি তখন বলি, ‘মিজান তুমি উত্তেজিত হচ্ছে কেন? আমরা বিষয়টা
জানি।‘ অধ্যাপক মিজান তাৎক্ষণিক আরও উত্তেজিত হয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ঐ ব্যাটা
তোর কথায় হবে? তুই কে? মাতব্বরি করিস? তোকে খুন করে ফেলবো।‘ আমি বলি, ‘মিজান ভদ্রভাবে
কথা বলো।‘ মিজান আরও উত্তেজিত হয় এবং অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল দিতে থাকে।”
ঘটনার
বিবরণ দিতে গিয়ে অধ্যাপক শহিদুল দাবি করেন, “অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক
ড. সমীর কুমার শীল দু’জনে মিলে তাকে থামানোর চেষ্টা করে; কিন্তু তথাপি আরও দুই দুইবার
সে আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসে। আমি পাজেল হয়ে যাই, বমি করি এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি।”
এ
বিষয়ে বিভাগের সহকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে
অভিযোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি।
অধ্যাপক
মিজানুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জার্নাল কমিটির সভায় শুধু আমি নই, উনিও
উচ্চবাক্যে বাদানুবাদ করেছেন। উনি এক সময় আমার শিক্ষক ছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য
আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। গতকাল (মঙ্গলবার) বিভাগের মিটিংয়ে আমাদের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মিজানুর রহমান আমাদের দুজনকে কোলাকুলি
করিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছিলেন। ওখানেই কিন্তু বিষয়টি শেষ।
“তারপরও
উনি আজকে এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর অতিরঞ্জিত করে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি
আপনি জার্নাল কমিটির সভায় উপস্থিত সম্পাদক ও অন্যদের জিজ্ঞাসা করেও সত্য জানতে পারবেন।”