জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
বলেছেন, এই যুদ্ধের কারণে মূল্য বাড়তে থাকায় দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি
আরও নাজুক হয়েছে; ইউক্রেইনের রপ্তানি যুদ্ধপূর্ব স্তরে ফেরানো না গেলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ
দেখা দিতে পারে আর তা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেইনের বন্দরগুলো
দিয়ে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধের আগে এসব বন্দর হয়ে বিপুল পরিমাণ সূর্যমুখী তেল,
গম ও ভূট্টা রপ্তানি হতো।
এই সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী
সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে এবং বিকল্প পণ্যগুলোর দাম বেড়ে গেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী,
বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্য গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার নিউ
ইয়র্কে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে জাতিসংঘের এক বৈঠকে গুতেরেস বলেন, “এই সংঘাত কোটি কোটি
মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে যা অপুষ্টি, অনাহার ও
দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে।
মূল্যস্ফীতি আর ঋণের চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার দশা দরিদ্র দেশগুলোর
খাবারের দাম বাড়ায় শিশুদের অপুষ্টি ‘বিপর্যয়’ আনতে পারে: জাতিসংঘ
ভারত রপ্তানি বন্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেড়েছে গমের দাম
“এখন আমাদের বিশ্বে পর্যাপ্ত
খাবার আছে যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি। কিন্তু আজ আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে
আসছে মাসগুলোতে আমাদের বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেইনে
উৎপাদিত খাদ্যের পাশাপাশি রাশিয়া ও বেলারুশের সারের উৎপাদনকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পুনঃসংযুক্ত
করা না গেলে এই খাদ্য সংকটের কার্যকর কোনো সমাধান হবে না।
খাদ্য রপ্তানি ফের স্বাভাবিক
পর্যায়ে আনার চেষ্টায় তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেইনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের সঙ্গে
‘নিবিড় যোগাযোগ’ রক্ষা করে চলছেন বলে গুতেরেস জানিয়েছেন।
যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্ব বাজারের
৩০ শতাংশ গম আসতো রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে। ওই সময় ইউক্রেইনের বন্দরগুলো দিয়ে প্রতি
মাসে ৪৫ লাখ টন কৃষি পণ্য রপ্তানি হতো, যে কারণে ইউক্রেইনকে বিশ্বের ‘রুটির ঝুঁড়ি’
হিসেবে দেখা হয়।
কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী
ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করলে এসব রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় ফলে দাম উর্ধ্বমুখি হতে শুরু
করে। শনিবার ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, আগের উৎপাদিত
ফসল থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ২ কোটি টন খাদ্য শস্য ইউক্রেইনে আটকা পড়ে আছে, এগুলো ছাড়
করাতে পারলে বিশ্ব বাজারে পড়া চাপ অনেকটা কমে আসতো।