ক্যাটাগরি

এবার থেকে শীতেও ভাসমান বেডে সবজি চাষ

বিল
বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলার জমি বছরের বেশিভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই পানিার ওপর
জলজ উদ্ভিদ কচুরিপনা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করেন। এসব কচুরিপানা পচার পর এসব বেডে
শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করে আসছিলেন কৃষকরা।

আর জমি
থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর এই ভাসমান সবজি চাষ বন্ধ থাকত। তবে এবার তার পরিবর্তন
ঘটল।

কৃষি
গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. মহসিন হাওলাদার
বলেন, এ বছর আমাদের ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরামর্শ ও
সহযোগিতায় কৃষক সেখানে শীতের সবজি করেছে।

এখন
ভাসমান বেডের মাচায় ঝুলছে লাউ, কুমড়া, শশা ও করলা। এছাড়া পালং শাক, লাল শাক,
বাঁধাকপি, ব্রকলি, টমেটো, ফুলকপিসহ বিভিন্ন শীতের সবজি ফলেছে ভাসমান বেডে। 

তিনি
জানান, এতে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ফাঁদের
ব্যবহার করা হয়। ফলে সবজির স্বাদ ও পুষ্টি গুণ থাকে অটুট। বিষমুক্ত এ সবজি মানব
দেহের জন্যও নিরাপদ।

বর্ষা
মৌসুমে বন্যা, বন্যা পরবর্তী ও শীতের সময়ে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা বছর
জুড়েই লাভবান পারছেন বললেন তিনি।

শুধু
শুষ্ক মৌসুমে সবজি চাষ শুরু ছাড়াও চাষাবাদের কৌশল পাল্টে চাষে ফসলের বৈচিত্রও আনা
হয়েছে।

ভাসমান
বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.মোস্তাফিজুর রহমান
বলেন, আগে কৃষক শুধুমাত্র পাতা জাতীয় লালশাক, ডাটা শাক, ঢেঁড়শ চাষ করত। এখন বেডে
মাচা দিয়ে গ্রীস্ম, বর্ষা ও শীতের লতা ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করছেন।

এটা
সম্ভব হয়েছে বেডের সাইজের পরিবর্তন করায়। এই পরির্বতনের কারণে বেড ভেঙে যাবার ভয়
থাকে না।

কৃষকদের
এ বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন,
ভাসমান বেডে সবজি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বন্যা, বন্যা
পরবর্তী ও শীতের সময়ে দেশের সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখবে ।

কয়েক প্রজন্ম
ধরেই বেডে চাষবাদে যুক্ত টুঙ্গিপাড়ার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শক্তি কীর্ত্তনীয়া
বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরমর্শে ও সহযোগিতায় চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন
এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বর্ষার পাশাপাশি শীতেও আমরা ভাসমান বেডে সবজি
উৎপাদন করছি।

এখন
প্রায় সারা বছরই এ পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে টাকা আয়ের দুয়ার খুলে গেছে বলছেন তিনি।

মুকসুদপুর
উপজেলার বহুগ্রামের কৃষক রাম কুমার মন্ডল বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই কম
খরচে এ সবজি উৎপাদান করা যায়।

এছাড়া
বাজারে ভাসমান বেডে উৎপাদিত সুস্বাদু সবজির চাহিদাও রয়েছে। কম খরচে উৎপাদিত এসব
নিরাপদ সবজি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে বেশ লাভ হয়।