পুরো জেলায় প্রায় পৌনে
তিনশ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ৭৮টিতে প্রায় সাড় ৬ হাজার মানুষ
আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে আবার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছে আশ্রিতরা।
এদিকে, পানিবন্দি মানুষের
দুর্ভোগ কমাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব ধরনের
ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন
বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, পানি এত বেশি আসছে যে বাঁধগুলো উপচে পড়ছে।
কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। সিলেটের বেশির ভাগ
এলাকাই এখন বন্যাকবলিত। জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ছয়টি আগেই প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে
দুটি প্লাবিত হয়েছে।
প্লাবিত ছয় উপজেলা
হলো সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর। এসব উপজেলার বন্যা
পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা।
বাকি ৫ উপজেলায় আংশিক পানি ঢুকেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,
জেলার ১৩ উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ আর ১৫টি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। পানিতে
নিমজ্জিত হয়েছে আউশ ধান ১ হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ফসল ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন
সবজি ১ হাজার হেক্টর।
পুরো জেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র
প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টিতে উঠেছে ৬ হাজার ৪৭৫ জন। গবাদি পশু রয়েছে ২৭২টি। বিদ্যালয়ে
পানি উঠার কারণে প্লাবিত এলাকার চার শতাধিক প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড
সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭
সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪টি
বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়।
“সিলেট সদর, দক্ষিণ
সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার
পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
“পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ,
গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে। এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও
পানি ওঠায় আশ্রিতরা বিপাকে পড়েছেন।”
নিলয় পাশা জানান, সুরমা
নদীর পানি বাড়তে থাকায় তীরবর্তী সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে পানি ঢুকতে শুরু
করেছে। নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, চাঁদনীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট,
তালতলা, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে
তলিয়ে গেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক
মজিবর রহমান বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১৪৯ টন চাল, ১
হাজার ৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ
পানি দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয়
থেকে আরও ২৫ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে; এসব
ত্রাণ দ্রুত বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর
শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ফিরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা
পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বলেন,
“পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির
কারণে সিটি করপোরেশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে
অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার, পয়ঃসুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে
সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে বলে জানান মেয়র।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত
নগরীর এলাকাগুলোতে খাবার পানির সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লাবিত
এলাকার পানিবন্দি মানুষের দোরগোড়ায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাঠানো হয়েছে। খাবার পানির
সংকট নিরসনে সিসিকের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বাড়ানো হবে আশ্রয়
কেন্দ্র।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ
মোকাবেলা ও প্লাবিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে
আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী
ও সিসিক কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর উপশহর তেরোরতন, কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, যতরপুর, সোহবানীঘাট, মাছিমপুর-ছড়ারপার, তালতলা, কাজিরবাজার,
ঘাসিটুলা, কানিশাইলসহ বিভিন্ন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র আরিফুল।
এরই মধ্যে সিলেট সিটি
কর্পোরেশন এলাকায় ১৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানান মেয়র আরিফ।