রংপুর শহরের শাহ জামাল মার্কেটে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের যাতায়াত বেশি। ঘিঞ্জি এই মার্কেটের চার হাত দৈর্ঘ্য আর আড়াই হাত প্রস্থের খোলা জায়গায় সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন বাদশা মিয়া। নতুন জামা বানানোর পাশপাশি পুরনো পোশাক মেরামত করা বা রিকশার ছাউনি সেলাই করে আয়রোজগার করেন বাদশা মিয়া।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফৈার ডটকমকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিক ও নমব শ্রেণি পড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। থাকেন শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে চিলমন পাঙ্গাটারী এলাকায়।
“প্রতি মাসে দোকানের ভাড়া গুনতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। আর এখন দ্রব্যমূল্যের যা ঊর্ধ্বগতি। জিনিসের দামের চাপে জীবনটা হামার বাহে চ্যাপটা হইয়া গেছে।”
দোকানটি ভাড়া নেওয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা জামানতও দিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাদশা মিয়া বলেন, বাড়ি থেকে আসা-যাওয়ার ভাড়া, দুপুরের খাবার, চা-নাশতার খরচসহ টুকিটাকি সব মিলিয়ে দিনে তার খরচ পড়ে ৬০০ টাকার বেশি। এছাড়া মাসের সংসার এবং ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। আর তিন হাজার টাকা দিতে হয় ঋণের কিস্তি।
“এখন বেলা বাজে দেড়টা, আয় করছি ১৫০ টাকা। তাহলে কন তো ভাই হামরা কেমন করে আছি?”
বাদশা মিয়ার মত শহরের নিম্নআয়ের অনেকেরই জীবনের গতি এখন নিম্নমুখী।
দশ বছর আগে ১৫ বছর বয়সে রংপুরের এরশাদ হকার মার্কেটে সেলাইয়ের কাজ শিখতে আসেন শামীম মিয়া। ধীরে ধীরে কাজ শেখার পর অবস্থা কিছুটা ফিরলে বিয়ে করেন। ঘরে কিছুদিন পর সন্তান আসে। বছর দুয়েক আগে নিজে একটি দোকান দেন শামীম।
শামিম বলেন, “বাবার কোনো জমি নাই। থাকি মামার দেওয়া জমিতে। হেইতে কোনো রহম একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে। এইতে একটু আছান যে মাস শ্যাষে ঘরভাড়া গুনতে অয় না।”
ভালোই চলছিল শামীমের সংসার। কিন্তু মহামারী শুরু হলে বদলে যায় জীবন।
শামীম বলেন, “কোনো কোনো দিন এক থেকে দেড় হাজার টাকাও রোজগার হয়, কোনো দিন আবার খালি পকেটে ফিরতে হয় বাড়িতে।”
আগে কম আয়েও মোটামুটি সংসার চালিয়ে নিতে পারলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তা আর পারছেন না বলে জানান। ধারদেনা আর এনজিওর ঋণ দিয়ে এই চাপ সামলাচ্ছেন তিনি।
“ঋণ লইয়্যাই মরতে লাগবে। এ বেলার পানি ও বেলা, আর ওবেলার পানি এবেলা। এই হলো হামার জীবন। রাইতে ঘুমাইতে পারি না। ঘুম আসে না। রাত পোয়ালে টাকার দরকার হয়। বাজারে গেলে মাথা নষ্ট হয়। আমাদের এটা কেমন জীবন।”