এমবাপেকে নিয়ে পিএসজি ও রিয়াল মাদ্রিদের দীর্ঘদিনের দ্বিমুখী লড়াইয়ে গত কয়েক সপ্তাহেই পট পরিবর্তন হয়েছে কয়েক দফা। সবশেষে শনিবার এর নাটকীয়তা পায় নতুন মাত্রা। দিনের শেষভাগ থেকে ইউরোপের গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে এমবাপের সিদ্ধান্ত ‘বদলে যাওয়ার’ খবর।
সেটাই আনুষ্ঠানিক রূপ পেল বাংলাদেশ সময় শনিবার মাঝরাতে। পিএসজির দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় এমবাপে জানালেন, প্যারিসেই থাকছেন তিনি।
একটু পরই লিগ ওয়ানে মৌসুমের শেষ ম্যাচে মেসের বিপক্ষে মাঠে নামে পিএসজি। নিজেদের আঙিনায় ম্যাচটি শুরুর আগে ক্লাব সভাপতি আল খেলাইফি ‘এমবাপে-২০২৫’ লেখা জার্সি হাতে হাসিমুখে জানান প্রিয় খেলোয়াড়ের নতুন চুক্তির খবর।
“আমি গর্বভরে আপনাদেরকে সুন্দর একটি খবর দিচ্ছি-কিলিয়ান এমবাপে পিএসজির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নতুন চুক্তিতে সই করেছে।”
এমবাপের রিয়ালে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম ধাপের গুঞ্জনের শুরু সেই ২০১৭ সালে। তখন তিনি ফ্রান্সেরই আরেক ক্লাব মোনাকোর খেলোয়াড়। সেই সময়ের গুঞ্জন অবশ্য ডানা মেলার আগেই শেষ হয়ে যায়। প্রথমে তিনি ধারে পিএসজিতে নাম লেখান, পরের বছর করেন স্থায়ী চুক্তি।
এই নাটকের দ্বিতীয় পর্ব শুরু গত মৌসুমের শেষে। পাকাপাকিভাবে পিএসজিকে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন এমবাপে। কিন্তু পিএসজি তাকে ছাড়তে ছিল নারাজ। স্পেনের সফলতম দলটি রেকর্ড ট্রান্সফার ফি দিতে প্রস্তুত থাকলেও মন বদলায়নি পিএসজি কর্মকর্তাদের।
এরপর সময় গড়িয়ে শুরু হয় নতুন বছর। ১ জানুয়ারি থেকেই ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবে নতুন ঠিকানা বেছে নেওয়ার পথ খুলে যায় এমবাপের। তার দলবদলের সম্ভাবনা নিয়েও নানা গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। আসতে থাকে নতুন নতুন খবর।
তাকে পাওয়ার ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল রিয়াল। পিএসজির পক্ষ থেকে যখনই এমবাপেকে নিয়ে নতুন কোনো গল্প বলা হয়েছে, প্রতিবারই রিয়ালের পক্ষ থেকে একরকম নিশ্চয়তার সুরেই বলা হয়েছে, চিন্তার কিছুর নেই, এমবাপে রিয়ালেই আসছেন।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক অবশ্য মনস্থির করতে পারছিলেন না। সংবাদমাধ্যমের খবর মতে, রিয়ালের সঙ্গে মৌখিকভাবে সমঝোতায়ও পৌঁছেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের কাছে এমবাপে কখনোই যে পরিষ্কার ছিলেন না, তার আভাস মেলে কিছুদিন আগে। বলেন, পিএসজিতে থাকবেন নাকি চলে যাবেন, এখন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।
তারপরও রিয়াল ছিল আত্মবিশ্বাসী। দলটির পক্ষ থেকে নানা সময়ে এর খেলোয়াড়দের মুখ থেকেও উচ্চারিত হয়েছে সসব কথা। কিন্তু সব এক নিমিষেই বদলে যেতে শুরু করে শুক্রবার। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, এমবাপে নাকি রিয়ালকে জানিয়ে দিয়েছেন যে প্যারিসেই থেকে যাচ্ছেন তিনি।
পরদিন সেই খবর শক্ত ভিত পায়। বিবিসি, রয়টার্স, মার্কা, লেকিপেসহ ইউরোপের সব শীর্ষ সারির গণমাধ্যমে একরকম নিশ্চিত করেই বলা হয়, রিয়ালের এমবাপেকে পাওয়ার আশা আরও একবার অপূর্ণই রয়ে যাচ্ছে।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই ২৩ বছর বয়সী সময়ের সবচেয়ে আলোচিত তারকা ফরোয়ার্ড জানান তার সিদ্ধান্ত।
“আমি জানাতে চাই যে পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্যই আমি খুব খুশি। আমার বিশ্বাস, এখানে এই ক্লাবে আমি আরও ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠব যে দলটি শীর্ষ পর্যায়ে ভালো করতে মরিয়া।”
“একই সঙ্গে আমি ফ্রান্সে, যে দেশে জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি এবং বিকশিত হয়েছি সেখানে খেলা চালিয়ে যেতে পেরেও অনেক খুশি।”
লিগ ওয়ানে গত মৌসুমের ব্যর্থতার পর এবার অনায়াসে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে পিএসজি। লিগে সাফল্য মিললেও সর্বোপরি ২০২১-২২ মৌসুমটা মোটেও ভালো কাটেনি তাদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি ফরাসি কাপ থেকেও আগেভাগে ছিটকে যায় তারা।
দলগত এসব ব্যর্থতার মাঝে অনেক ম্যাচে নেইমার-লিওনেল মেসিরা ছিলেন ছায়া হয়ে। এমনকি সমর্থকদের দুয়োও শুনতে হয় তাদের। তবে হতাশাময় পথচলায় এমবাপে ছিলেন উজ্জ্বল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৬ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে তিনি করান ২৬ গোল।
ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতার হওয়ার পাশাপাশি এরই মধ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো লিগ ওয়ানের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন এমবাপে।