রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরো অন্তত ২৮ জনের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ থাকায় তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর বাইরেও আরও মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
আক্রান্তরা কোন কোন দেশের নাগরিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তা প্রকাশ করেনি। তবে বিবিসি লিখেছে, যেসব দেশে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তার মধ্যে ইউরোপের নয়টি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে।
মাঙ্কিপক্স এমনিতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ভাইরাসজনিত এ রোগ সাধারণত মৃদু অসুস্থতার কারণ ঘটায় এবং অধিকাংশ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান।
সাধারণ ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এ ভাইরাস ছড়ায়। ফলে আইসোলেশন ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে সহজেই এর বিস্তার ঠেকানো সম্ভব বলে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য।
এ ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই। তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।
“তবে এখন যেটা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে, মানুষের দেহে এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে যৌনতার মাধ্যমে। যৌনরোগের মতই যৌনাঙ্গের মাধ্যমে সংক্রমিত করছে। এটা এর বিস্তার বাড়িয়ে দিয়েছে,” বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড হেম্যান।
ইউরোপের জনস্বাস্থ্য বিভাগগুলো এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেনে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্সের এবারের প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক, কারণ যে এলাকায় সাধারণত এ রোগ হয়, তার বাইরে এবার সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
যেসব দেশে ইতোমধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে, যাতে আরও কেউ সংক্রমিত হলে তাদের শনাক্ত করা যায়। এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত সে বিষয়ে সামনের দিনগুলোতে বিস্তরিত পরামর্শ ও নীতিমালা দেওয়া হবে।
নতুন এলাকায় হঠাৎ করে এ রোগ কেন ছড়াতে শুরু করল, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও পাননি বিজ্ঞানীরা। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, ভাইরাসটির জিন কাঠামোতে হয়ত কোনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। তবে এটাকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বলার মত তথ্য প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক হ্যান্স ক্লুজ বলছেন, এখানে এখন গ্রীষ্ম শুরু হচ্ছে। উৎসব, অনুষ্ঠান, পার্টি, লোক সমাগম বাড়বে। তাতে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।”
তিনি জানান, যাদের মধ্যে গত কিছুদিনে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে একজন বাদে অন্য কেউ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার সেসব দেশে যাননি, যেখানে মাঙ্কিপক্স এনডেমিক বা সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ।
জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়।
এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
যেহেতু এ রোগ সাধারণভাবে প্রাণঘাতী নয়, তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও খবর
মাঙ্কিপক্স: দেশের সব বন্দরে সতর্কতা
মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ইউরোপে ‘সবচেয়ে বড়’ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ, আক্রান্ত ১শ’ ছাড়িয়েছে