ক্যাটাগরি

সুখ: অনলাইন নির্ভরতা ও অতিমারিকালের বিচ্ছিন্নতাবোধের গল্প

একসময় সেটেলড ম্যারেজ ছিল মেনে নেওয়ার প্রতীক আর নিজ পছন্দের বিয়েটা ছিল বিপ্লবী ঘরানার। যে কোনো ফর্মের বিয়েই হোক, বিবাহিত জীবনটা আসলে দুই আলাদা মানুষের এক থাকার চেষ্টা। এই চেষ্টার ভেতর থাকে আপস, মানিয়ে নেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা। একই সঙ্গে থাকে নিজস্বতা, আলাদা ভালো লাগা আর পছন্দের সমাহার। এক ছাদের নিচে সবকিছু মানিয়ে নিতে না পারলে চিন্তা ও চেতনার যে বিভাজন, সেখানেও জমে শ্যাওলা, পিছলে পড়তে হয়।

নিজেদের পছন্দের জিনিসগুলো ক্রমশ স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করে ফেলতে পারে। কেউ ভালোবাসতে পারে রাগ সঙ্গীত, সঙ্গীর তখন ভালো লাগতে পারে ব্যান্ডের গান। একজনের যখন কফি খেতে মন চায়, অন্যজন তখন চায়ের ইচ্ছে পোষণ করে। কেউ মাছ খেতে চাইলে তার সঙ্গীর হয়ত তখন মাংস ছাড়া চলে না।

সংসার জীবনে আবদ্ধ দুজন মানুষের এই আলাদা পছন্দের জিনিস বা আসবাব যদি ভালোবাসা বা সহমর্মিতার আপোসে সমাহার করা না যায়, যদি সেটা প্রতিযোগিতার পর্যবসিত হয়, তাহলে সুখ থাকে না, বিচ্ছিন্নতা বোধ গ্রাস করে। সেই বোধ থেকেই এক ছাদের নিচের দুই আলাদা মানুষ আরও আলাদা হয়, আলাদা হয় ভালোবাসার বিছানা, অদৃশ্য বা প্রকাশ্য দেয়াল তাদের আরও আলাদা করে।

‘সুখ’ বিবাহিত জীবনের আটপৌরে এক গল্প, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল জীবনের অনলাইন নির্ভরতা আর অতিমারির সময়কার ‘নিরাপদ দূরত্বের’ সড়ক। অনলাইন নির্ভরতা ও নিরাপদ দূরত্ব যেন সংসারের দুজন মানুষের ভালোবাসার দূরত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে।

‘সুখ’ দেখে নাগরিক জীবনযাপনের ‘ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য’ ও বিচ্ছিন্নতা বোধ স্মরণে আসতে পারে, মনে হতে পারে সেই কবিতার লাইন-মানুষ মূলত একা! মনে হতে পারে অনলাইননির্ভর ব্যবসায়ীদের সংসারে পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার কিংবা নজরদারির পাঁয়তারা। মনে হতে পারে খানিকটা দীর্ঘ সংলাপ, কিন্তু সংসারের খুঁটিনাটি হাসির দিক। খুব স্বাভাবিক, সংসারের পরিচিত সব দ্বন্দ্ব নিয়ে সুখ পরিচিত এক মঞ্চ নাটক। পুরো নাটকে আঁতলামি নেই, আছে সাধারণ দর্শকদের মনের কথা বলার চেষ্টা। নাটকের শেষ গানটাও বর্তমান জীবন যাপনের এক নাগরিক সুরে বাঁধা জীবনের গল্প।

নির্দেশক ও এই নাটকের অভিনেতা ইউসুফ হাসান অর্ককে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ যারা মঞ্চ পরিকল্পনা, আলোক, পোশাক ও সংগীত পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাটকের শেষ গান যার সুর ও কণ্ঠ ইউসুফ হাসান অর্কর, আলাদা ভাবে সেটি জনপ্রিয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘সুখ’ নাটকের অন্যান্য অভিনয় শিল্পীরা হচ্ছেন হাবিব মাসুদ, শ্যামা ভট্টাচার্য্য, মৌশ্রী দাস নিশু, সাজিদ উচ্ছাস এবং সামিউল হক।

সুখ এর প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ২০২১ এর অক্টোবরে। সুখ আরও বেশি মঞ্চায়িত হোক এই কামনা রইলো।

শুভ কামনা রইলো কবিয়ালমুক্ত প্লাটফর্মের জন্য।