ক্যাটাগরি

শেষদিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে রোববার অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো সিটি।

ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পর ইলকাই গিনদোয়ানের নৈপুণ্যে ব্যবধান কমায় তারা। পরক্ষণে সমতা টানেন রদ্রি। এর পরপরই গিনদোয়ানের দ্বিতীয় গোলে শিরোপা ধরে রাখা নিশ্চিত হয় সিটির।

অ্যানফিল্ডে একই সময়ে শুরু হওয়া ম্যাচে শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবলে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় লিভারপুল। অনেক অপেক্ষার শেষ দিকে জয়সূচক গোলের দেখাও পায় তারা; কিন্তু ৩-১ গোলে জয়ের পরও আরও একবার শিরোপার হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকেই খালি হাতে ফিরতে হলো তাদের।

শেষ দিনের এই শিরোপা লড়াই দারুণ সব নাটকীয় রূপ নেয়- সিটির দুই গোলে পিছিয়ে পড়া, লিভারপুলের শুরুতেই গোল হজম করা, সমতা ফেরানোর পর শেষ দিকে ইয়ুর্গেন ক্লপের জয় ছিনিয়ে নেওয়া। এসবের মাঝেও শিরোপাভাগ্য কিন্তু সবসময় সিটির হাতেই ছিল।

তিন বছর আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমেও ঠিক একইভাবে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল সিটি। আর স্বপ্ন ভাঙার হতাশায় মাঠ ছেড়েছিল লিভারপুল।

সেদিনের মতো এবারও সিটির জন্য সমীকরণ ছিল সহজ, জিতলেই মাথায় থাকবে মুকুট। তবে পা হড়কালেই ঘটতে পারতো বিপদ। তাদের হোঁচটের অপেক্ষাতেই ছিল লিভারপুল।

ক্লপের দলের প্রথম করণীয় ছিল, নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার। সেই অভিযানে নামতে না নামতেই নিজেদের জাল থেকে কুড়িয়ে আনতে হয় বল। তৃতীয় মিনিটে সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে রাউল হিমেনেস বিপজ্জনক জায়গায় খুঁজে নেন পেদ্রো নেতোকে। অনায়াসে টোকায় বাকি কাজ সারেন পর্তুগিজ এই উইঙ্গার।

ধাক্কা সামলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ তৈরি করে লিভারপুল। সুযোগও আসতে থাকে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে বারবার গুলিয়ে ফেলছিল তারা। ওদিকে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সিটি বল দখলে একচেটিয়া আধিপত্য করলেও ভালো কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। তাদের খেলায়ও ছিল না চেনা গতি।

শুরুতে কিছুটা মিইয়ে পড়া অ্যানফিল্ড আবার জেগে ওঠে ২৪তম মিনিটে। থিয়াগো আলকান্তারার দারুণ ব্যকহিল পাস পেয়ে অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ওয়ান-অন-ওয়ানে বল জালে পাঠান মানে। আসরে এটি তার ১৬তম গোল।

সিটির মাঠে ৩৭তম মিনিটে শিরোপা লড়াই নাটকীয় মোড় নেয়। দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে সেখানে স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেয় অ্যাস্টন ভিলা। বাঁ থেকে সতীর্থের ক্রসে হেডে গোলটি করেন ম্যাটি ক্যাশ। ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি গোলরক্ষক এদেরসন।

বিরতির পর টানা কয়েকটি আক্রমণ করা সিটি ৫০তম মিনিটে দারুণ সুযোগ পায়। কিন্তু গোলমুখ থেকে উড়িয়ে মারেন গাব্রিয়েল জেসুস। ডাগআউটে গুয়ার্দিওলার চোখে-মুখে তখন তীব্র হতাশা।

অ্যানফিল্ডে ৬৪তম মিনিটে হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারতো। তবে দূর থেকে ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার আর্নল্ডের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন উলভস গোলরক্ষক।

এর একটু পরই অন্য ম্যাচের ফলে লিভারপুলের আশার পালে হাওয়া লাগে। ৬৯তম মিনিটে ফিলিপে কৌতিনিয়োর দারুণ এক গোলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে সিটি। গোলরক্ষকের লম্বা করে নেওয়া শট অলি ওয়াটকিন্স হেডে আরও সামনে বাড়ান। আর বল ধরে ডি-বক্সে একজনকে কাটিয়ে নিচু শটে পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যে পাঠান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।

আরেক ম্যাচের ফল পক্ষে, লিভারপুলের তখন চায় কেবল একটি গোল। চাপ ধরে রেখেও কাজের কাজটা করতে পারছিল না তারা।

কোণঠাসা সিটি ৭৫তম মিনিটে দুই বদলি খেলোয়াড়ের নৈপুণ্যে পেয়ে যায় ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ। ডান দিক থেকে রাহিম স্টার্লিংয়ের ক্রসে হেডে ব্যবধান কমান গিনদোয়ান।

এর দুই মিনিট পরই স্কোরলাইনে সমতা টানে সিটি। জিনচেঙ্কোর বাঁ দিক থেকে বাড়ান বল ডি-বক্সের বাইরে ধরে নিখুঁত শটে ঠিকানা খুঁজে নেন রদ্রি।

নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা সিটি তৃতীয় গোলও পেয়ে যায় খানিক বাদেই। কেভিন ডে ব্রুইনের গোলমুখে বাড়ানো বল ছোট্ট এক টোকায় জালে জড়ান গিনদোয়ান। স্কোরলাইন ৩-২, উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন গুয়ার্দিওলা।

লড়াইয়ের তখনও বাকি বেশ খানিকটা। তবে এমন দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর দলের আত্মবিশ্বাস যে তুঙ্গে।

তারপরও অনিশ্চয়তা তো ছিলই। কেননা, ওদিকে লিভারপুলও যে এগিয়ে যায় ৮৪তম মিনিটে। জোয়েল মাতিপের হেডে বাড়ানো বল কাছ থেকে আলতো শটে দলকে এগিয়ে নেন বদলি ফরোয়ার্ড সালাহ। ৮৯তম মিনিটে অ্যান্ডি রবার্টসনের গোলে জয়টাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।

বাকি কয়েক মিনিটে তখন দেখার একমাত্র বিষয় ছিল, অ্যাস্টন আবারও নতুন করে সিটির বুকে আঘাত হানতে পারে কিনা। না, পারেনি তারা, তাদের পারতে দেয়নি সিটি। কোনোমতে বল দখলে রেখে শেষের রুদ্ধশ্বাস কয়েকটি মিনিট কাটিয়ে দেয় তারা।

শক্তহাতে রক্ষণ আগলে রেখে পাঁচ বছরে চতুর্থবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় করে ম্যানচেস্টার সিটি। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের ইতিহাসে এই নিয়ে অষ্টমবার চ্যাম্পিয়ন হলো তারা; এর মধ্যে ২০১১-১২ মৌসুম থেকেই জিতল ৬ বার!

৩৮ ম্যাচে ২৯ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করল ম্যানচেস্টার সিটি। ২৮ জয় ও আট ড্রয়ে লিভারপুলের পয়েন্ট ৯২।

এরই সঙ্গে অসাধারণ এক কীর্তিতে নাম লেখাল গুয়ার্দিওলা ও তার দল; পাঁচ বছরে চারবার জিতল লিগ শিরোপা। দারুণ এই সাফল্য আর আছে কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে ক্লাবটি অবশ্য এই কীর্তি গড়েছিল তিনবার।

শেষ হয়ে গেল বহুল আলোচিত লিভারপুলের ‘কোয়াড্রপল’ জয়ের স্বপ্ন। তবে লিগ কাপ ও এফএ কাপ জয়ী দলটির সামনে এখনও বেঁচে আছে ‘ট্রেবল’ জয়ের সম্ভাবনা। আগামী শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে ক্লপের দল।