দুই
দেশেই বহু গ্রাম ও শহর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, ভারতে একটি রেলওয়ে স্টেশন ভেসে গেছে প্রবল
ঢলে। বহু মানুষ খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে রয়েছে, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিতরণও বিঘ্নিত
হচ্ছে অনেক এলাকায়।
নিউ
ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আসাম রাজ্যে বন্যায়
তলিয়ে গেছে রেললাইন, সেতু ও রাস্তা। রাজ্যের ৩৩ জেলার ৩১টিই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ৭
লাখের বেশি মানুষ সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আসামের
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বন্যা ও ভূমিধসে
অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।
কাছাকাছি
রাজ্য বিহারের ১৬ জেলায় বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টিপাতে অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে
জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার।
বিজ্ঞানীরা
বলছেন, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উষ্ণমণ্ডলীয় জলরাশির কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় সামনের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
আগের চেয়ে ঘন ঘন তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
পুনের
ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজির এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের
তাপমাত্রা বাড়ায় ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু অংশে ‘শুষ্ক পরিস্থিতি’র উদ্ভব হয়েছে এবং অন্য
অনেক এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টি বেড়েছে।
ভারতের
আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত উত্তরপূর্বাঞ্চলের অনেক স্থানে ‘বজ্রপাত
ও অতিভারি বর্ষণসহ ঝড় হতে পারে, যেখানে গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায়
বিস্তীর্ণ কৃষিজমি, গ্রাম ও শহর প্লাবিত হয়ে আছে।
ব্রহ্মপুত্র
ও অন্যান্য নদ-নদীর পানি ব্যাপক ঢলের আকারে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং সিলেট-সুনামগঞ্জের
হাওর অঞ্চলে অনেক বাঁধ উজানের এই ঢলের তোড়ে ভেঙে গিয়ে কৃষিজমি প্লাবিত করেছে।
কর্মকর্তাদের
বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে।
রোববার
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, “গত দুই দশকে সিলেট
অঞ্চলে আমরা এত ব্যাপক বন্যা দেখিনি। ভারি বৃষ্টিপাত ও সুরমা নদী দিয়ে বন্যার পানির
ব্যাপক ঢলের কারণেই এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।”
কর্মকর্তাদের
বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বন্যার মধ্যে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে,
বেশিরভাগই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে মারা গেছেন।
সিলেটের
বিভাগীয় কমিশনার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আরও হতাহত আছে কিনা, জানতে আমরা উদ্ধার তৎপরতা
চালিয়ে যাচ্ছি।”
বন্যার
কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না।
অথচ বন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ছয়জনের
পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মাহমুদুল হাসান (২৯) বলেন, “জাকিগঞ্জে আমাদের গ্রামে
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমাদের বাড়িটি মাটির ঘর। জানি না সেটার কি অবস্থা।”
কর্মকর্তারা
জানান, বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য সরকার স্থানীয় ৬০০ বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের
জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। কমপক্ষে ৩ হাজার হেক্টর ধানী জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে।