প্রথম দিন বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৭৭/৫ |
বিভীষিকার শুরুর পর স্বপ্নের দিন
৭ ওভারের মধ্যে নেই ৫ উইকেট। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে কাঁপছিল বাংলাদেশ দল। ২৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারানো দল লাঞ্চ পর্যন্ত খেলতে পারবে কিনা, শঙ্কা ছিল সেটাই। সেই দলই কিনা সারাদিনে হারাল না আর কোনো উইকেট! মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দিনটা নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ।
দিন শেষে দুজনের অবিচ্ছিন্ জুটির রান ২৫৩। ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম দুইশ রানের জুটি এটি। ২৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোর পর শতরানের জুটিও ছিল না টেস্ট ইতিহাসে আর কোনো দলের।
নবম টেস্ট সেঞ্চুরিতে মুশফিক খেলছেন ২৫২ বলে ১১৫ রান করে। তৃতীয় সেঞ্চুরিতে লিটন দিন শেষ করেছেন ২২১ বলে ১৩৫ রান নিয়ে।
শ্রীলঙ্কার দুই পেসার নতুন বলে অসাধারণ বোলিং করার পর স্পিনাররা পারেননি সেই ধারা ধরে রাখতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৭৭/৫ (জয় ০, তামিম ০, শান্ত ৮, মুমিনুল ৯, মুশফিক ১১৫*, সাকিব ০, লিটন ১৩৫*; রাজিথা ১৯-৫-৪৩-৩, আসিথা ১৭-২-৮০-২, জয়াবিক্রমা ২৯-৯-৮১-০, রমেশ ১২-০-৪১-০, ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৫-০, করুনারত্নে ৪-১-৮-০)।
বাংলাদেশের স্বস্তির সমাপ্তি
দ্বিতীয় নতুন বলেও জুটিতে ফাটল ধরাতে পারল না শ্রীলঙ্কা। দিনের শেষ কয়েক ওভার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করে দিলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। বাংলাদেশের জন্য দিনের শেষটা হলো দুর্দান্ত।
শেষ সেশনে ৩২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তুলল ১২৪ রান।
দ্বিতীয় নতুন বল
যেন এই সময়টারই অপেক্ষা করছিলেন দিমুথ করুনারত্নে। ৮০ ওভার শেষ হতেই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে নিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। বল তুলে দিলেন তিনি সকালে নতুন বলে ধ্বংসযজ্ঞের নায়ক কাসুন রাজিথার হাতে।
মুশফিকের সেঞ্চুরি
রমেশ মেন্ডিসের বল আলতো করে পয়েন্টের দিকে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে দুঁহাত উঁচিয়ে ধরলেন মুশফিক। মুখে তার চওড়া হাসি। মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে ছোঁড়ার পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন মাঠে সেজদা দিয়ে। আরও একটি সেঞ্চুরি!
আগের টেস্টে ২৭০ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ক্যারিয়ারের মন্থরতম সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। এবারের ইনিংসটিও কম ধৈর্যশীল নয়। উইকেট আগলে রেখে দারুণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞার মিশেলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন ২১৮ বলে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। এটি।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বার তিনি টানা দুই টেস্টে করলেন সেঞ্চুরি। টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন প্রথমবার।
জুটির দুইশ
পঞ্চাশ, একশ, দেড়শ হয়ে মুশফিক ও লিটনের জুটি এবার স্পর্শ করল দুইশ। টেস্টে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম দুইশ রানের জুটি এটি।
২৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসে শতরানের জুটিও ছিল না আগে আর কখনও।
২৫৮ বলে আসে জুটির দুইশ। তাতে লিটনের অবদান ১৬৬ বলে ১১৬, মুশফিকের ১৯২ বলে ৮০।
লিটন-মুশফিক জুটির দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটি এটি। গত নভেম্বরে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষ দুজনে ২০৫ রান যোগ করেছিলেন পঞ্চম উইকেটে।
জুটির রেকর্ড
প্রায় ১৫ বছর আগে জুটি যে রেকর্ড গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম, এবার সেই রেকর্ড পেরিয়ে গেলেন তিনি আরেকজনকে নিয়ে। লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে মুশফিক গড়লেন ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের জুটির রেকর্ড।
২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পি সারা ওভারে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে ১৯১ রানের জুটি গড়েচিলেন মুশফিক। সেই রেকর্ড এবার অতীত হয়ে গেল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে।
ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা জুটিতেও আছে মুশফিকের নাম। জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে ২০১০ সালে চট্টগ্রামে তিনি গড়েন ১৬৭ রানের জুটি।
লিটনের সেঞ্চুরি
আগের টেস্টে আশা জাগিয়েও নিজের খামখেয়ালিতে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছিলেন লিটন দাস। এবার আর তেমন ভুল করলেন না। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান দারুণ খেলে পূর্ণ করলেন শতরান ওভার থ্রো থেকে পাওয়া বাউন্ডারিতে তিন অঙ্ক স্পর্শ করলেন তিনি ১৪৯ বলে। আগের টেস্টে আউট হয়েছিলেন তিনি ৮৮ রানে।
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ২৫ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ছিল না। সেই লিটন ৩ সেঞ্চুরি করে ফেললেন ৮ ইনিংসের মধ্যে। গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে স্বাদ পান প্রথম সেঞ্চুরির, জানুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে করেন দ্বিতীয়টি। এবার মিরপুরেও সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি।
রিভিউ হারাল শ্রীলঙ্কা
জুটি ভাঙতে জেন্টল মিডিয়াম পেস নিয়ে নিজেই বোলিংয়ে আসেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। দ্বিতীয় বলই লাগে মুশফিকের প্যাডে। জোরাল আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। বেশ কিছুটা সময় ভেবে একদম শেষ সেকেন্ডে রিভিউ নেন করুনাত্নে। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা যায়, মিডল স্টাম্পে পিচ করে ভেতরে ঢোকা বল বেরিয়ে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের দিয়ে। লঙ্কানরা তাই হারাল একটি রিভিউ।
বাংলাদেশের দারুণ সেশন
মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চা বিরতি এলো বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে। গোটা সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ, ৩০ ওভারে রান এনেছে ৮৭।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-লিটনের অবিচ্ছিন্ন জুটি রান ১২৯।
২৫ বা এর কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসের সেরা জুটি এটি। আগের সেরা ছিল পাকিস্তানের ওয়ালিস ম্যাথিয়াস ও সুজাউদ্দিনের। সেই ১৯৫৯ সালে, সেটিও ছিল ঢাকায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ৮৬ রান যোগ করেছিলেন এই দুজন।
চা বিরতির সময় ১৫৬ বলে ৬২ রানে ব্যাট করছেন মুশফিক, ১২৫ বলে ৭২ রানে লিটন।
মুশফিক-লিটন জুটির হাজার
টেস্টে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের জুটিতে হাজার রান ছুঁতে এই টেস্টে প্রয়োজন ছিল ১১৮ রান। দুজনে পেরিয়ে গেলেন সেই সীমানা।
বাংলাদেশের অষ্টম জুটি হিসেবে হাজার রান তুললেন এই দুজন। হাজার ছোঁয়ার সময় দুজনের জুটির গড় ছিল ৬৬.৬৬। বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১০ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করা জুটিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গড় এই দুজনেরই।
১৬ ইনিংসেই ৪টি শতরানের জুটি গড়ে ফেলেছেন এই দুজন। বাংলাদেশের হয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর রেকর্ড ৫ বার শতরানের জুটি গড়েছেন ৩২ ইনিংসে।
মুশফিকের পঞ্চাশ
লিটনের পর এবার ফিফটি করলেন মুশফিকুর রহিমও। প্রাভিন জয়াবিক্রমার বলে ধ্রুপদি এক কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে তিনি পা রাখলেন মাইলফলকে। আগের টেস্টে ধৈর্যশীল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এবার পঞ্চাশ ছুঁলেন ১১২ বলে।
টেস্টে তার ২৬তম ফিফটি এটি, সেঞ্চুরি আছে আরও ৮টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি হলো তার ৮টি, সেঞ্চুরি করেছেন দুটি। এই ইনিংসের পথে লঙ্কানরে বিপক্ষে তার ব্যাটিং গড় স্পর্শ করল পঞ্চাশ।
জুটির শতরান
ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফ স্পিনে লিটন দাসের বাউন্ডারিতে জুটি পেরিয়ে গেল একশ। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের ১০৩ রানের জুটি ২০৫ বলে।
জুটিতে বড় অবদান লিটনের, ১০২ বল খেলে ৬১ রান তার। মুশফিকের অবদান ১০৪ বলে ৪০।
লিটনের ফিফটি
শর্ট বলে জীবন পাওয়ার পর শর্ট বলে পুল করে বাউন্ডারি মেরেই ফিফটি পূরণ করলেন লিটন। আগের টেস্টে ৮৮ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এবার পঞ্চাশে পা রাখলেন ৯৬ বলে।
লিটনের ত্রয়োদশ টেস্ট ফিফটি এটি, সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ২টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ টেস্টে ফিফটি ৪টি।
ফিফটি করার পরের বলে আবারও শর্ট বল পেয়ে আরেকটি লিটনের আরেকটি পুল শট, এবারও বল রাখতে পারেন তিনি নিচে। দারুণ টাইমিং ও প্লেসমেন্টে বল পেরিয়ে যায় বাউন্ডারি।
বেঁচে গেলেন লিটন
জুটি ভাঙার বড় সুযোগ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু লিটন দাসের ক্যাচ নিতে পারলেন না বদলি ফিল্ডার কামিন্দু মেন্ডিস।
লিটন ও মুশফিকের জন্য শরীর তাক করা শর্ট বলের কৌশল নিয়ে টানা বোলিং করছিলেন আসিথা ফার্নান্দো। সুযোগটা এসেছিল সেই কৌশলেই। শর্ট বল পেয়ে পুল শট খেলে নিচে রাখতে পারেননি লিটন। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে বল উঠে যায় বাতাসে। স্কয়ার লেগ থেকে একটু পেছনে ছুটে বলের নিচে গিয়েও হাতে জমাতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস।
লিটন জীবন পেলেন ৪৭ রানে।
মুশফিক-লিটন জুটির পঞ্চাশ
দলের দুঃস্বপ্নের শুরুর পর প্রতিরোধ গড়া মুশফিকুর রহিম ও লিটান দাসের জুটিতে এসেছে পঞ্চাশ, ১১২ বলে। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে টানছেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। নিজের জোনে পেলে কিংবা বাজে বল পেলেই কেবল চার মারছেন। এক-দুই নিয়ে সচল রেখেছেন রানের চাকা।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার সময় জুটিতে লিটনের অবদান ৩১, সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাওয়া মুশফিকের ২০। ২ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে।
একদমই প্রভাব ফেলতে পারছেন না বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমা। তার বলেই লিটনের চমৎকার বাউন্ডারিতে ম্যাচে প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পায় বাংলাদেশ। আগের পাঁচ জুটির কেবল একটি যায় দুই অঙ্কে, মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি ভাঙে ১০ রানে।
দুঃস্বপ্নের সেশনে আলোর রেখা মুশফিক-লিটনের জুটি
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সাত ওভারের মধ্যে ২৪ রানে নেই ৫ উইকেট! কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোর দারুণ বোলিংয়ের সামনে তখন কাঁপছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে কক্ষপথে ফেরাতে লড়াই করছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ৬৬ রান। ৪৭ বলে তিন চারে ২২ রানে ব্যাট করছেন অনেকবার দলকে বিপদ থেকে টেনে তোলা মুশফিক। রাজিথার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া লিটন চারটি চারে ৫৪ বলে খেলছেন ২৬ রানে।
ষষ্ঠ উইকেটে এই দুই জনে ৯৭ বলে গড়েছেন ৪২ রানের জুটি। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টেও বড় একটি জুটি গড়েছিলেন এই দুই জনে। মিরপুরে দলের বাজে শুরুর পর আলোর রেখা তাদের ব্যাটিংই।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে যতটা সফল লঙ্কান দুই পেসার, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ততটা নন। রাজিথা ও ফার্নান্দোকে সাবলীলভাবেই খেলছেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। স্পিনাররা একদমই ভাবাতে পারেননি মুশফিক ও লিটনকে।
প্রথম ঘণ্টায় সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন পেসাররা। দ্বিতীয় ঘণ্টায় স্পিনারদের দুয়েকটা বলে টার্ন মিলেছে। একটা-দুইটা বল নিচুও হয়েছে।
প্রথম দুই ওভারে ফেরেন দুই ওপেনার। রানের খাতা খুলতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল। গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান সাকিব আল হাসান। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি নাজমুল হাসান শান্ত। ব্যর্থতার চক্রেই আটকে আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
দুই প্রান্তেই স্পিন
১৯তম ওভারে বোলিং করার পর পেসার আসিথা ফার্নান্দোকে আর ফেরালেন না লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে আক্রমণে আনলেন তিনি। আরেক প্রান্তে বোলিং করে যাচ্ছেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। দুই প্রান্তেই এখন স্পিন সামলাতে হবে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে।
দ্বাদশ ওভারে স্পিন
প্রথম ঘণ্টার পানি পানের বিরতির পর প্রথম ওভারটি করলেন কাসুন রাজিথা। এরপর বোলিংয়ে পরিবর্তন আনলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক। লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার জায়গায় একাদশে ফেরা প্রাভিন জয়াবিক্রমা এলেন আক্রমণে। তার ওভারটি মেডেন খেলেন মুশফিকুর রহিম।
‘গোল্ডেন ডাক’ সাকিব
১৩ বছরের বেশি সময় পর টেস্টে প্রথম বলে আউট হলেন সাকিব আল হাসান। ক্যারিয়ারে প্রথম ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়েছিলেন তিনি সেই ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। প্রতিপক্ষ সেবারও ছিল শ্রীলঙ্কা, চট্টগ্রামে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন অজান্ত মেন্ডিসের বলে।
সব মিলিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১১ ইনিংসে তার পঞ্চম শূন্য এটি।
সাকিব এলেন ও গেলেন
দলের বিপর্যয়ে ত্রাতা হতে পারলেন না সাকিব আল হাসানও। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিদায় নিলেন প্রথম বলেই। ৭ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ইনিংসের অর্ধেক হারাল বাংলাদেশ।
রাজিথার কৌশল ছিল একই। ডেলিভারিটি করেন তিনি রাউন্ড দা উইকেটে ক্রিজের বেশ দূর থেকে, তবে লাইন এবার ছিল আরেকটু সোজা। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকে এই বলও। সাকিব প্রথম বলেই লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে মিস করেন লাইন। বল লাগে পায়ে। জোরাল আবেদনে একটু ভেবে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
সাকিব রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই। তবে রিভিউয়ে দেখা যায়, ব্যাটে লাগেনি বল। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল আঘাত করছিল লেগ স্টাম্পে। আম্পায়ার্স কলে টিকে থাকে সিদ্ধান্ত।
সাকিব আউট হলেন প্রথম বলেই। বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২৪।
নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস।
এবার গেলেন শান্ত
আসিথা ফার্নান্দো দুই উইকেট নিলেন, কাসুন রাজিথা পিছিয়ে থাকবেন কেন! দ্বিতীয় শিকার ধরলেন তিনিও। নাজমুল হাসেন শান্তকে হারিয়ে বিপদ আরও বাড়ল বাংলাদেশের।
রাউন্ড দা উইকেটে এসে ক্রিজর বেশ দূর থেকে বল করেন রাজিথা। সেই অ্যাঙ্গেলেই বিভ্রান্ত হন শান্ত। একটু ভেতরে ঢোকা বলে সামনে অনেক পা বাড়িয় খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক রয়ে যায় অনেক। সেখান দিয়েই বল ভেতরে ঢুকে আঘাত করে স্টাম্পে। কয়েকবার ডিগবাজি খেয়ে স্টাম্প চলে যায় কিপারের কাছে।
২১ বলে ৮ রান করে আউট শান্ত। বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ২৪।
মুমিনুল ব্যর্থ আবার
ব্যর্থতার বলয় এই ইনিংসের ছিঁড়তে পারলেন না মুমিনুল হক। আলগা শট খেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক বিদায় নিলেন দলকে বিপদে ঠেলে। আসিথা ফার্নান্দো ধরলেন তার দ্বিতীয় শিকার।
অফ স্টাম্পে পিচ করে অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলটি অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন মুমিনুল। বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলবেন কী ছেড়বেন ভেবে শেষ মুহূর্তে ব্যাট পেতে দিলেন। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেল বেশ। বল তার ব্যাটের কানায় আলতো ছুঁয়ে আশ্রয় নিল কিপারের গ্লাভসে।
৯ রানে আউট হলেন মুমিনুল। এই নিয়ে টানা ৬ ইনিংসে তিনি বিদায় নিলেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। সবশেষ ১৪ ইনিংসের ১১টিতেই তিনি স্পর্শ করতে পারলেন না ১০।
বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৬। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।
শূন্যতেই শেষ তামিমও
মাহমুদুল হাসান জয়ের মতো কোনো রান না করে বিদায় নিলেন তামিম ইকবালও। বাংলাদেশ দুই ওপেনারকে হারাল প্রথম দুই ওভারেই।
আসিথা ফার্নান্দো বলটি খুব ভালো কিছু ছিল না। লেগ-মিডলে থাকা বলটিতে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য খানিকটা হারিয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন আগেই। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় পয়েন্টের দিকে। ডানদিকে ফুল লেংথ ডাইভে দারুণ ক্যাচ নেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা।
৬৭ টেস্টে দশমবার শূন্য রানে ফিরলেন তামিম। বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৬।
নতুন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক।
জয়ের আরেকটি শূন্য
ক্যারিয়ারের শুরুতে অম্ল-মধুর স্বাদ পেয়ে চলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। কখনও লম্বা ইনিংস, কখনও শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়া!
৬ টেস্ট আর ৯ ইনিংসের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৪ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে গেল তার। এই মাঠেই গত ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসে আউট হন শূন্য রানে। এরপর গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিতা সফরে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে দুই ইনিংসেই আউট হন শূন্য রানে। এরপর এই শূন্য।
এই শূন্যগুলোর ফাঁকে ২৯২ মিনিটে ৭৮, ৪৪২ মিনিটে ১৩৭ ও ২১৮ মিনিটে ৫৮ রানের ইনিংস আছে তার।
শুরুতেই শেষ জয়
ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা। কাসুন রাজিথার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। আগের টেস্টে ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে নেমে প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এবার নিলেন ম্যাচের প্রথম ওভারে।
ম্যাচের প্রথম বলটি ছিল লেগ স্টাম্পে ফুল লেংথ। জয়ের ব্যাটে লাগলেও সেটিতে হালকা আবেদন করেন রাজিথা। পরের বলে আর আবেদনের ব্যাপারই নেই। লেংথ বলে এক পদক্ষেপ পেছনে গিয়ে খেলতে চান জয়, কিন্তু পা আটকে থাকে ক্রিজেই। একটু দেরিও করেন খেলতে। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।
শূন্য রানেই বিদায় নিলেন মাহমুদুল। রান তোলার আগেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
‘আগের চেয়ে ভালো’ উইকেট
হালকা সবুজ ঘসের ছোঁয়া আছে উইকেটে। তবে পেস বোলারদের সহায়তার চেয়ে এটি বরং বেশি কাজে লাগবে উইকেটকে ব্যাটিং সহায়ক করতে। পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার রোশান আবেসিংহে বললেন, সবুজ ঘাসের নিচে শুষ্ক জায়গা দেখতে পাচ্ছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে তাই ক্রমে আরও শুষ্ক হবে উইকেট। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরের দিকে স্পিনারদের বড় ভূমিকা থাকবে এখানে।
টস জয়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক বললেন, ম্যাচের শুরুর দিকে উইকেট ব্যাটিং বান্ধব থাকবে। পরের দিকে কঠিন হয়ে উঠবে ব্যাটিং।
মিরপুরে টার্নিং উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে বলছেন, এবার মিরপুরের উইকেট আগের চেয়ে ভালো। তবে শুরুতে ব্যাটিংয়র জন্য ভালো হবে বলে ধারণা তারও।
স্পিন আক্রমণে বদল শ্রীলঙ্কার
চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে শ্রীলঙ্কার সহ-অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা বলেছিলেন, মিরপুর টেস্টে তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবেন তারা। তবে একাদশের গঠন দেখা গেল এক রকমই, দুই পেসার ও দুই স্পিনার। তবে বদলে গেল মুখ। লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার জায়গায় সুযোগ পেলেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমা।
গত বছর টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষেই ১১ উইকেট নিয়েছিলেন জয়াবিক্রমা। নিজের সবশেষ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে গত মার্চে নেন ৭ উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার শুরুর একাদশ থেকে পরিবর্তন আছে আরও একটি। তবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন ওই টেস্টের মাঝপথেই। বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নেমে ৪ উইকেট শিকার করে এবার শুরুর একাদশেই জায়গা করে নিয়েছেন কাসুন রাজিথা।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), ওশাদা ফার্নান্দো, কুসল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দিনেশ চান্দিমাল, নিরোশান ডিকভেলা, রমেশ মেন্ডিস, আসিথা ফার্নান্দো, প্রাভিন জয়াবিক্রমা, কাসুন রাজিথা।
দুই পরিবর্তন বাংলাদেশ একাদশে
বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন ছিল অবশ্যম্ভাবী। চট্টগ্রাম টেস্ট চলার সময়ই চোটে ছিটকে যান শরিফুল ইসলাম। ওই টেস্টে পাওয়া চোটে ম্যাচের পর জানা যায় নাঈম হাসানের মাঠের বাইরে যাওয়ার খবর। এই টেস্ট তো বটেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরের সিরিজেও নেই এই দুজন।
শরিফুলের বদলে একাদশে এসেছেন পেসার ইবাদত হোসেন। নাঈমের বদলে কোনো বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনার যুক্ত করা হয়নি দলে। একাদশে তার জায়গা নিয়েছেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
টসে হাসি মুমিনুলের
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড টস জয়ের কথা বলা মাত্র নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করেননি মুমিনুল হক। বাংলাদেশ অধিনায়ক চটপট জানিয়ে দিলেন, ব্যাট করবেন তারা।
টেস্টে সময় যত গড়াবে, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হবে বলে ধারণা মুমিুনুলের। তাই প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়তে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে জানালেন, টস জিতলে আগে ব্যাটিং করতেন তারাও। তার মতে, এখানে প্রথম ইনিংসের রান হবে গুরুত্বপূর্ণ।
জয়ের আশায় দুই দল
মিরপুরে সবশেষ ৮ টেস্টই দেখেছে জয়-পরাজয়। সবশেষ এখানে ম্যাচ ড্র হয়েছিল ২০১৫ সালে। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার সেই টেস্টে প্রথম দিন খেলা হওয়ার পর চার দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। এবারও এখানে ফল হবে, ধারণা বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের।
টেস্ট শুরুর আগের দিন মুমিনুল বললেন, আগের টেস্টকে পেছনে ফেলে নতুন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন তারা।
“মিরপুরে ফলাফল ছাড়া ম্যাচ খুব কমই হয়। শেষ কবে ফল আসেনি বলা কঠিন। সবসময় ফল আসে। বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গে ব্যাটিংও। অবশ্যই আমরা পরিকল্পনা করি, কোন জিনিস নিয়ে কাজ করলে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।”
“আমার কাছে মনে হয়, ভালো একটা সুযোগ আছে আমাদের। চট্টগ্রাম টেস্টে কী হয়েছে সেগুলো চিন্তা না করে, এখন আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। কারণ আগেও অনেক সময় (প্রথম টেস্ট ড্র করে পরের ম্যাচে হেরে গেছি)… ওই জায়গা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। ঢাকা টেস্টেও যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, তাহলে ফল আমাদের পক্ষে আসবে।”
ইংল্যান্ড কোচ ক্রিস সিলভারউডের ধারণা, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে।
“আমার মনে হয় না ম্যাচটি সহজ হবে। দুই দলই জিততে চায়। গত ম্যাচে বেশ কঠিন লড়াই হয়েছে। কখনও কখনও মোমেন্টাম খুব দ্রুত বদলে গেছে। বাংলাদেশ কখনও কখনও আমাদেরকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে, আমরা সেখান থেকে লড়াই করে ম্যাচে টিকে থেকেছি।”
“আমার মনে হয়, এখানেও এমনই হবে। এখানে খেলা হয়তো আরও গতিময়তায় সামনে এগোবে। এটার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের। রোমাঞ্চকর ক্রিকেটের জন্য মুখিয়ে আছি আমি।”
চেনা প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার সবশেষ দুই সিরিজই শেষ হয়েছিল একই ধারায়। প্রথম টেস্ট হয়েছিল ড্র। দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ জিতে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছে চট্টগ্রামে। অপেক্ষা এখন মিরপুর টেস্টের।