বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে আসেন তিনি। ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানেরর আদালতে আত্মসমর্পণ করে সম্রাট জামিন চাইবেন বলে তার আইনজীবী আফরোজা শাহানাজ পারভীন হিরা জানিয়েছেন।
সম্রাট আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর আগেই তার কয়েকশ সমর্থক সেখানে উপস্থিত হন। সম্রাটের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
গত ১১ মে ওই আদালত তিন শর্তে সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু দুদকের আবেদনে ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ তা বাতিল করে দেয়। সেই সঙ্গে তাকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত এই নেতা সম্রাট।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
সেদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
কার্যালয়ে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে অর্থপাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগেও সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে অস্ত্র, অর্থ পাচার, মাদক ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের ওই চার মামলায় জামিন পান তিনি। তাতে ৩১ মাস পর মুক্তি মেলে তার।
মুক্তির আগে প্রায় দেড় বছর কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন ছিলেন সম্রাট। ১১ মে বিকালে জামিনের কাগজপত্র হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানেই তার মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। মুক্তির পরও তাকে হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকের সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হার্টের ক্রনিক অসুখে’ আক্রান্ত সম্রাটকে হাসাপাতালেই রাখার পক্ষে তারা। তবে পরিবার চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য হাসপাতালে বা বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই সম্রাটকে আবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে উচ্চ আদালতের আদেশে।
গত ১৮ মে হাই কোর্টের ওই আদেশের পর সম্রাটের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “নিম্ন আদালতের আদেশের সামান্য ত্রুটির কারণে জামিন বাতিল করেছে হাই কোর্ট। সম্রাট এখনও অসুস্থ, আমি আদালতকে বলেছি- তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন। আজকের আদেশ অনুযায়ী বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে মেডিকেল গ্রাউন্ডেই আবার জামিন আবেদন করা হবে।”
আরও পড়ুন:
সম্রাটের জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ