ক্যাটাগরি

এমন উদ্ভট কথা ‘বলতেই পারেন না’ সিইসি

এমন কথা ‘বলতেই পারেন না’ দাবি করে সিইসি বলেছেন, “এর মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এতে।

“ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়, শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কমিশনের আগামী জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”

মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যায়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীরের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার মাদারীপুরে গিয়ে ইভিএমকে ত্রুটিমুক্ত দাবি করে আনিছুর বলেন, “ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সিইসি।”

ওই বক্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার নিজের অবস্থান তুলে ধরলেন সিইসি।

তিনি বলেন, “বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে- সিইসি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছেন- এটা উদ্ভট কথা। সিইসি এ ধরনের উদ্ভট কথা বলতেই পারেন না।

“এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। কেউ তার ভালোবাসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন, ইভিএম যারা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন। ওইভাবে কেউ একজন বলেছেন, ওখান থেকে জিনিসটা এসেছে।”

ওই বক্তব্য ‘নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য নয়’ জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও এ কথা বলেননি, কমিশনার তো দূরের কথা.. .বলতে পারেন না।”

নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সিইসি বলেন, “মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্যে, সিইসিকে অপদস্ত করার জন্যে (ইসি আনিছুর) তিনি বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

নির্বাচন কমিশনারদের কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার এবং দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন সিইসি।

তিনি বলেন, কমিশনার যে বক্তব্যটি দিয়েছেন তা আরেক জায়গা থেকে ‘কোট’ করতে গিয়ে হয়ত বিভ্রান্তি হয়ে গেছে।

“এ যন্ত্রটা (যদি) এক হাজার শতাংশ নির্ভুল হয়, তাহলে উনি (যদি) ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলেন, তাহলে উদ্ভট নয়। আমরা তো বলছি না- এটি ১০০ শতাংশ নির্ভুল। ওই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি।

“১০ মিলিন ডলার কথাটা উচ্চারিত হয়েছে কোনো প্রসঙ্গে, কোনো একটা জায়গায়। আমার মুখ থেকে নয়, কমিশনের কারো মুখ থেকে নয়… এটা ডিগিং করা উচিত নয়। যারা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, তাদের পণ্যটার প্রশংসা করতে গিয়ে আবেগবশত হয়ত এ কথাটা বলেছেন।”

সিইসির ভাষ্য, “একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলতেই পারে। এ ধরনের একটা বক্তব্য কোনো একটা জায়গায় উত্থাপিত হয়েছিল। হয়ত আমার মাথায় নেই। এটা কোট করতে গিয়ে মিসকোট হয়েছে। এটাই সত্য, সত্য এবং সত্য।

“মাত্র পাঁচ-সাতদিন আগে চিঠি দিয়ে সকলকে জানালাম- ইভিএম নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কোনো চাপের মুখে আমরা মাথা নিচু করছি না। আমরা যদি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণাই করে দিই, তাহলে হলে ইয়ে (সংলাপ) হবে কেন?…আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।”

ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সময় এখনও আসেনি মন্তব্য করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “বারবার বলেছি, দায়িত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও দশটা (মিটিং) হবে, এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিই- ইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই- এটা হতে পারে না।”

ইভিএম নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় এখনও ‘আস্থার অবস্থান তৈরি হয়নি’ বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “আমরা পাঁচটা মিটিং করেছি, পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করব। আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। কালকেও কারিগরি মিটিং হবে।”

আরও কয়েকটি বৈঠকে সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, “এখনও চেষ্টা করছি, চার কমিশনার ও আমি লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।”

গত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সমালোচনার জবাবে সিইসি বলেন, “ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না-এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (ইসি আনিছুর মাদারীপুরে) স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে।”

তবে ইভিএম নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনাকে ‘ইতিবাচকভাবেই দেখেন’ বলে জানান সিইসি।

আরও খবর

ইভিএম ত্রুটিমুক্ত: নির্বাচন কমিশনার আনিসুর