বুধবার সকালে সুব্রত সাহা (৫২) নামে মারা যাওয়া ওই প্রকৌশলী রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক (প্রকৌশলী) হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের লবির ছাদে সুব্রতের মৃতদেহ
উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে
ঘটনাস্থলে আসে।
সরকারি কোম্পানি বিএসএল এর মালিকানায় থাকা এ তারকা হোটেল পরিচালনা করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) (আইএইচজি)।
পুলিশ বলছে, সকাল সোয়া ৯টার পরে সুব্রত কর্মস্থলে হাজিরা না দিয়েই লিফটে করে
সরাসরি হোটেলের ছাদে চলে যান।
উপ কমিশনার সাজ্জাদুর বলেন, “আশেপাশের সব সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। যেখানে
‘টপ ফ্লোরে’ যাওয়ার ফুটেজ পাওয়া গেছে। আরও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়কে আমরা গুরুত্বের
সাথে দেখছি এবং সব বিষয়ে মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।”

সুব্রত সাহা
সুব্রত সাহার নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক কন্যা সন্তান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সকালে হোটেলের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে সরাসরি লিফট দিয়ে তিনি টপ ফ্লোরে চলে যান। এরকম সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে।”
এর আগে রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
তিনি হোটেল ছাদ থেকে কীভাবে পড়েছেন, কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে- না কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এসব বিষয় তদন্ত না করে বলা যাবে না বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ প্রকৌশলীর ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়াকে ‘রহস্যজনক মৃত্যু’বলে মন্তব্য করেছেন
রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ।
বিকালের দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঘটনাস্থলে এসে তথ্য
করে।
নিহত সুব্রত সাহার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।
এ প্রকৌশলীর মৃত্যুর বিষয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হোটেলের কমিউনেকশন বিভাগের সহিদুল সাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৃহস্পতিবার
আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
কাজের চাপে ‘অস্থিরতা’ ছিল সুব্রতর,
অভিযোগ স্ত্রীর
অফিসের ‘কাজের চাপে’ এক ধরনের ‘অস্থিরতার’ মধ্যে থাকতেন রাজধানী ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল
হোটেলের ছাদ থেকে পড়ে নিহত প্রকৌশলী সুব্রত সাহা বলে অভিযোগ তার স্ত্রী নুপুর সাহার।
বুধবার সকালে ৫২ বছর বয়সী এ প্রকৌশলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বেলা ১টার পর তিনি শাহবাগে
অবস্থিত এ হোটেলে ছুটে আসেন।
পরে সন্ধ্যায় হোটেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, গত কয়েক মাস তার স্বামীকে
‘মানসিক অস্থিরতার’ মধ্যে থাকতে দেখেছেন। কয়েকদিন ধরে এটা বেশি ছিল বলে তার মনে হয়েছে।

তার স্বামীর সাম্প্রতিক অবস্থা তুলে ধরে নুপুর সাহার দাবি, অফিসের কাজের একটি
চাপ ছিল তার উপর। এ প্রতিষ্ঠানে ২২ বছর ধরে কাজ করলেও এতদিন যে কাজ করতে তার বদলে তাকে
অন্য কোনো কাজ ‘চাপিয়ে’ দেওয়া হয়েছে বলে তার ধারণা।
বিষয়টি সুষ্পষ্ট করে বলতে না পারলেও নিহতের স্ত্রীর অভিযোগ, “উনাকে (সুব্রত)
অন্য কাজ দেওয়া হয়েছে। যেটা উনার পক্ষে সম্ভব না।”
তার স্বামী এটা পরিবর্তন করতে চাইলেও সে সুযোগ দেওয়া হয়নি, বলে ভাষ্য নুপুরের।
স্বামীর দুর্ঘটনার খবরে দুপুরে হোটেলে আসা নুপুর সাহা বের হন সন্ধ্যার পর। তিনি
জানান, সকাল ৯টার দিকে সেন্ট্রাল রোডের বাসা থেকে প্রতিদিনের মত বের হন সুব্রত। অন্যদিন
নাস্তা করলেও এদিন না খেয়েই নাস্তার টেবিল থেকে উঠে চলে যান।
তিনি বলেন, “কয়দিন যাবত মন খুব খারাপ। সকালেও মন খারাপ ছিল। সকালে যখন নাস্তা
দেওয়া হয় উনি খেতে চায়নি- খায়নি। বসে আবার উঠে পড়েন। বলেন, ‘আমার খেতে ভাল লাগছে না’।”
অন্যান্য দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মেয়েকে বিদায় জানালেও আজ (বুধবার) ঘুমিয়ে
ছিলেন উল্লেখ করে নুপুর জানান, তার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারে এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে
না।
এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন তিনি।