মোটে ১০ টাকা দিয়ে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময়ে ভেন্ডিং মেশিন থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিতে পারছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো হয় দেশের প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন।
এই ‘ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন’ উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বসানোর খরচও বহন করেছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ফ্রিডম।
শুরুতে ১০টি ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়। আর তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার নারী শিক্ষার্থীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বসানো ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন
এসিআই কনজিউমার ব্র্যান্ডসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো আছে।
“মাত্র ১০ টাকায় এখন যে কোনো সময়ে মেয়েরা ভেন্ডিং মেশিন থেকে ন্যাপকিন কিনে নিতে পারেন।”
ফ্রিডমের বসানো ভেন্ডিং মেশিনে ১০ টাকার একটি নোট ঢোকালেই বেরিয়ে আসে এক পিস স্যানিটারি প্যাড।
“এতে নেই কোনো ফিসফিস করে কারো কাছে প্যাড চাওয়ার বিড়ম্বনা অথবা দোকানে যাওয়া-আসার, খোলা-বন্ধ থাকার বিড়ম্বনা। বর্তমানে স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন যেন এক স্বস্তির নাম”, বলছে এসিআই কনজিউমার ব্র্যান্ডস।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আদলে এই ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডিরেক্টর কামরুল হাসান বলেন, “ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে বর্তমানে একশটিরও বেশি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
“ফ্রিডম আগামীতে আরও ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে ফ্রিডম হাইজিন নেটওয়ার্ক তৈরি করে নারীদের মেন্সট্রুয়েশন হাইজিন নিশ্চিতে এগিয়ে যাচ্ছে।”
ফ্রিডমের ভেন্ডিং মেশিন থেকে মাসিকের দিনে স্যানিটারি প্যাড কেনেন এমন কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন সাবেকুন নাহার প্রীতি।
আগে মাসিকের দিনে বিব্রত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হুটহাট পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে কমনরুমে এসে খালাদের খুঁজতে হত, অনেক সময় তারা থাকেন না। একটা উদ্ভট পরিস্থিতিতে পড়তে হত। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় এমন পরিস্থিতি খুবই বিব্রতকর ছিল।”
ভেন্ডিং মেশিনে সহজেই স্যানিটারি প্যাড মেলার পর থেকে মাসিকের দিনগুলো আর আগের মত নেই সাবেকুন নাহার প্রীতির
“এখন ভেন্ডিং মেশিন থাকার কারণে যখন তখন চাইলেই প্যাড নিতে পারি। আগে খুচরা প্যাড পাওয়া না গেলে অনেক সময় পুরো প্যাকেট কেনা লাগতো। এখন অল্প দামেই খুচরা প্যাড পাচ্ছি।”
ভেন্ডিং মেশিন থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানজিনা তারান্নুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্রিডমের প্যাডগুলো এমনিতেও বেশ ভালো। আর ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে এত সহজেই এত ভালো প্যাড পেয়ে যাচ্ছি। এটা একটা ভালো ব্যাপার।”
তবে অনেকেই ‘ব্যবহারবিধি ঠিকমত না পড়ে ভুল নিয়মে ব্যবহার করছে বলে ভেন্ডিং মেশিনগুলো প্রায়ই নষ্ট থাকে’ এমন অভিযোগও করেন এই নারী শিক্ষার্থী।
তানজিনা তারান্নুম বলেন, “এটা যেহেতু মেশিন, সেহেতু এর ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে, এটা শিক্ষার্থীদের মাথায় রাখা উচিত। সবার সুবিধার্থেই এই ভেন্ডিং মেশিন যত্নের সাথে ব্যবহার করা দরকার।”
সাবেকুন নাহার প্রীতির মত মাসিকের দিনে ‘বিব্রত হওয়ার’ মত পরিস্থিতির কথা জানালেন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের আয়েশা সিদ্দিকা আবাসিক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রোদেলা বিশ্বাস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত বিরাতে হুটহাট পিরিয়ড শুরু হলে খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হত।
“রাতে বাইরেও বার হওয়া যায় না, দোকানও খোলা থাকে না। এর-ওর কাছে প্যাড চাওয়াটাও বিব্রতকর।”
“এই সমস্যায় ফ্রিডমের ভেন্ডিং মেশিন বেশ স্বস্তি দিয়েছে আমাদের”, বলেন রোদেলা বিশ্বাস।
এসিআই কনজিউমার ব্র্যান্ডস বলছে, একশটি ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন থেকে সহজে ও সাশ্রয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সুবিধা পাচ্ছে ৩৫ লাখেরও বেশি নারী।