বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “আমরা কীভাবে মন্দা এড়াতে পারি- সেই পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।”
বিবিসি লিখেছে, সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে আসতে পারে বলে সতর্কবার্তা আসছিল গত কিছুদিন ধরে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল বিশ্ব ব্যাংক প্রধানের এই আশঙ্কা।
কোনো বছর মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় কতটা বাড়ল, সেই পরিমাণকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি, যা শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। কোনো বছর মোট উৎপাদন না বেড়ে কমে গেলে বলা হয় অর্থনীতি ‘সঙ্কুচিত’ হয়েছে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে শূন্যের নিচে। অর্থনীতির ওই দশাকেই ‘মন্দা’ বলে।
ডেভিড ম্যালপাস বলেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনে ধারাবাহিক লকডাউনের কারণেও অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে, যা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
“আমরা বৈশ্বিক জিডিপির দিকে যদি তাকাই… কীভাবে একটি মন্দা আমরা এড়াব, তার একটি পথ পাওয়া এ মুহূর্তে খুবই মুশকিল। শুধু জ্বালানির দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কাই এককভাবে একটি মন্দার সূচনা করার জন্য যথেষ্ট।”
গত মাসে বিশ্ব ব্যাংক এ বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় পুরো এক শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
প্রতিটি দেশ এই জিডিপির তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা সাজায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের মুদ্রানীতি ও সুদের হার নির্ধারণ করে। বিনিয়োগ প্রবণতাও এর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়, কারণ সামনে খারাপ দিনের আভাস থাকলে টাকা খাটানোর ঝুঁকি না নেওয়াটাই স্বাভাবিক।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান ডেভিড ম্যালপাস
ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ইউরোপের অনেক দেশই এখনও জ্বালানি তেল ও গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়নের জন্য সময় লাগবে।
ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ওই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংক প্রধান বলেন, রাশিয়া ওই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ধীর’ হয়ে যাবে।
জ্বালানির বাড়তি দাম এরই মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এবং
ইউক্রেইনে যুদ্ধের জেরে বিশ্ব মন্দার শঙ্কা বিশ্ব ব্যাংক প্রধানের
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। সার, খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোও ভুগছে।
চীনের বড় শহরগুলোতে লকডাউন চলার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানান ম্যালপাস। বিশেষ করে দেশটির আর্থিক, উৎপাদন, ও জাহাজ যোগাযোগের কেন্দ্র সাংহাইয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
“চীনে এরইমধ্যে আবাসন খাতে এক ধরনের সঙ্কোচন চলছে, তাই ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর আগেই ২০২২ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এরপর নতুন করে কোভিড লকডাউন জারি হওয়ায় সে দেশের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাকে আরও কমিয়ে দিয়েছে।”
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াংও বুধবার স্বীকার করেছেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর সময়ের লকডাউনের চেয়ে, এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের কঠোর লকডাউনে অনেক বেশি ধাক্কা সইতে হচ্ছে তাদের অর্থনীতিকে। লকডাউনের পর কারখানা চালু করতে কর্মকর্তাদের আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।