ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলোর নানা কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিমা বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিও রাশিয়ায় তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছে।
সম্প্রতি ফাস্টফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ড রাশিয়ার সঙ্গে তাদের প্রায় তিন দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। তারা দেশটিতে তাদের সব আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেখানকার সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পরপরই ম্যাকডোনাল্ড রাশিয়ায় তাদের সব দোকান বন্ধ করে দেয়। তবে কোম্পানিটি এতদিন কর্মীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছিলো। এখন তারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় তাদের স্থানীয় কর্মীরা বেকার হয়ে পড়েছে।
এভাবে স্থানীয় রুশদের বেকার হয়ে পড়া আটকাতে এবং বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় নানা কোম্পানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া আটকাতে রাশিয়া সরকার নতুন ওই আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
যেসব পশ্চিমা কোম্পানি রাশিয়া ছেড়ে যেতে চাইছে নতুন আইনে রুশ সরকারকে সেসব কোম্পানির উপর হস্তক্ষেপের বিস্তৃত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফলে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর নিজেদের রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার কাজটি আরো অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। যদি না তারা বড় আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে।
কারণ, নতুন আইনে রাশিয়া বিদেশি কোম্পানির স্থানীয় সম্পদ জব্দ করতে পারবে।
ইতালির ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিক্রেডিট, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংক রাইফিসেন, বিশ্বে আসবাবপত্রের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড আইকেইএ, ফাস্টফুড চেইন বার্গার কিংসহ আরো কয়েকশ ছোট ছোট বিদেশি কোম্পানি এখনো রাশিয়ায় ব্যবসা করছে। যদিও তাদের কেউ কেউ আপাতত কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। এখন তাদের কোনোটি যদি রাশিয়া থেকে ব্যবসা স্থায়ীভাবে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে নতুন আইনের কারণে তাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
আইকেইএ রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে না নিলেও আপাতত দেশটিতে তাদের সব কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। নতুন আইনের বিষয়ে তারা রয়টার্সকে বলেন, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
রাইফিসেন কর্তৃপক্ষ জানান, তারা সব বিকল্প বিবেচনা করে দেখছেন। যারমধ্যে সাবধানতার সঙ্গে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা সেই বিকল্পও রয়েছে।
ইউনিক্রেডিট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। আর বার্গার কিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে রয়টার্স।
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘অবন্ধু দেশগুলো’ থেকে আসা বিদেশি মালিকানার কোম্পানি যারা ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিকে টেনে নামাতে দেশটি থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে রুশ সরকার ওই কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
সাধারণত যেসব দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাদের ‘অবন্ধু দেশ’ বলে বর্ণনা করে রাশিয়া। এর অর্থ নতুন আইনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে।