পিঠা খাওয়া, বেড়ানো, বাহারি পোশাকের দিক
থেকে শীতকালটা যতই প্রিয় ঋতু হোক না কেনো গোসলের সময় তা প্রিয় নয়। ঠাণ্ডার ভয়ে গোসল
না করা, পরে মায়ের বকুনি খেয়ে গোসল করা।
এই গোসল করতে গিয়ে গরম পানির বন্দোবস্ত
করা যেন আরেক গল্প। চুলা খালি পাওয়া যায় না তো একজনের গরম পানি আরেকজন নিয়ে গোসল সেরে
ফেলে, পরে আবার বসে থাকতে হয়।
হাড়িতে পানি গরম করাকে কেন্দ্র করে পুড়ে
যাওয়া দুর্ঘটনার সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
এই সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান দিতে পারে
পানি গরম করার যন্ত্র ‘গিজার’।
বাড়িতে ‘গিজার’ বসানোর ক্ষেতে প্রথমেই
যে চিন্তাগুলো মাথায় আসে তার মধ্যে বাড়তি খরচটাই মুখ্য। নতুন একটি যন্ত্র কেনা এবং
বসানো, ভবিষ্যত বিদ্যুত খরচের কথা চিন্তা করে অনেকেই পিছিয়ে যান। তবে বাজার ঘুরে দেখা
গেল খরচটা খুব বেশিও নয়।
গিজার’য়ের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ‘টিয়েরা ইন্টারন্যাশনাল’য়ের কর্ণধার মাইনুল
ইসলাম খানের সঙ্গে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন ভবনে পানি
গরম করার যন্ত্র বসানোর পাশাপাশি ফেইসবুকের মাধ্যমেও ‘গিজার’ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
মাইনুল ইসলাম বলেন, “গিজার’ মূলত হয় দুই
ধরনের ‘ইনস্ট্যান্ট টাইপ’ আর ‘ট্যাংক টাইপ’। ‘ইনস্ট্যান্ট টাইপ’ গরম পানির যন্ত্র হল,
একটি কল যার সঙ্গে পানি গরম করার ছোট একটি যন্ত্র জুড়ে দেওয়া আছে। বাড়ির পানির লাইন
থেকে আসা ঠাণ্ডা পানি ওই যন্ত্র হয়ে কল দিয়ে বাইরে আসবে। আর যন্ত্রটি চালু থাকলে তাৎক্ষনিক
পানি গরম হবে। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হল শুধু ওই কলটি থেকেই গরম পানি পাওয়া যাবে।”
“ট্যাংক টাইপ গিজার’ হল একটি আলাদা পানির
‘ট্যাংক’ যেখানে জমা থাকা পানি ‘হিটার’য়ের সাহায্যে গরম হবে। সেই গরম পানির বাড়ির যেকোনো
কলেই আনা সম্ভব। বাসাবাড়িতে যে ‘ট্যাংক টাইপ গিজার’গুলো সাধারণত ব্যবহার হয় তার পানি
ধারণ ক্ষমতা হয় ৩০, ৪৫, ৬৭ কিংবা ৯০ লিটার। এরচাইতে বড় গিজার যে হয়না তা নয়, তবে সেগুলো
‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড’ ফলে দাম বেশি।”
৩০ থেকে ৯০ লিটারের ‘গিজার’গুলোর দাম
পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। ধারণ ক্ষমতা যাই হোক না কেনো ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই
এতে থাকা ‘হিটার’ ‘ট্যাংক’য়ের পুরো পানি গরম করতে সক্ষম।
এই ‘গিজার’গুলো পানির তাপমাত্রা পরিমাপের
কোনো ‘সেন্সর’ থাকে না এবং তাতে সেন্সর আলাদাভাবে বসানোও সম্ভব না। তাই কতক্ষণ চালানো
হয়েছে তার হিসাবে রেখে কিংবা পানি গরম হয়ে গেলে আপনাকেই তা খেয়াল করে বন্ধ করতে হবে।
অন্যথায় পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে দুর্ঘটনা ঘটবে, আর বিদ্যুত খরচ তো বাড়বেই।
তবে যদি ক্রমাগত পানি ব্যবহার হতে থাকে
তবে লম্বা সময়ও চালানো সম্ভব, খেয়াল রাখতে হবে গরম পানি জমা থাকা অবস্থায় ‘গিজার’টি
যেন চলতে না থাকে।
আর এই মাথাব্যথা একেবারেই নিতে না চাইলে
কিছু বেশি টাকা খরচ করে ‘বিল্ট ইন সেন্সর’ আছে এমন ‘গিজার’ কিনতে হবে। যা পানি নির্দিষ্ট
মাত্রায় গরম হওয়ার পর গিজাটি স্বনিয়ন্ত্রিত ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
‘গিজার’ বসানোর ব্যাপারে মাইনুল ইসলাম
বলেন, “বাড়ির পানির লাইনে যদি ইতোমধ্যেই গরম পানি ও ঠাণ্ডা পানির জন্য পৃথক লাইন থাকে
তবে ‘গিজার’ বসানোর কাজটি বেশি সহজ, খরচও বেশি নয়।”
মূল যন্ত্রটি ছাড়া আরও কিছু যন্ত্রপাতি
বসাতে হয় যার খরচ প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। আর মিস্ত্রির কাজের মজুরি প্রায় ৫শ’ টাকা।
সাধারণত বাড়ির শৌচাগারের ওপরে থাকা ‘ফলস’
ছাদে ট্যাংক আর অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসানো হয়। ‘ফলস’ ছাদ না থাকলে শৌচাগারের ভেতরে
কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানেও তা বসানো সম্ভব।
তবে গরম পানির জন্য পৃথক লাইন না থাকলে
নতুন করে লাইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচটা বাড়বে যা নির্ভর করবে কতটুকু পাইপ ও অন্যান্য
সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে তার ওপর।
গরম পানির যন্ত্রের বাজারে পরিচিত নামের
মধ্যে আছে শামিম, ভিশন, মেলানো, ওয়ালটন ইত্যাদি। বিদ্যুত খরচের দিক থেকে এই ‘গিজার’গুরো
ব্যবহার করলে মাসিক খরচ প্রায় দুইশ থেকে তিনশ টাকা বাড়তে পারে।
আরএফএল সম্প্রতি বাজারে এনেছে ‘রিমোট
কন্ট্রোলড গিজার’। যেকেনো স্যানিটারি দোকানে সবধরনের গিজার দেখে শুনে দামদর করে কিনতে
পারবেন।