শারীরিক ফিটনেসের উন্নতির জন্য ২০০৭ সালে সিলেট সেনানিবাসে ক্রিকেটারদের বুট ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল বিসিবি। সামরিক প্রশিক্ষণে ক্রিকেটারদের ফিটনেসের দারুণ উন্নতিও হয়েছিল সেবার। এবার ক্রিকেটারদের মানসিক ফিটনেসের উন্নতির জন্য সহায়তা নেওয়া হচ্ছে সামরিক বাহিনীর।
আইএসএসবি’র (ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড) মনোবিদদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের কয়েকটি সেশন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বিসিবি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের মধ্যেই একটি সেশন করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি করা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই অন্তত দুটি সেশন করার পরিকল্পনা আছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
“আমরা অলরেডি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আইএসএসবির সঙ্গে কথা বলেছি বিস্তারিত। সব পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে ২০ মে একটা সেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন ছেলেরা ক্লান্ত ছিল প্রচণ্ড গরমে খেলে, কারও শক্তি ছিল না। রিকভারি করাও জরুরি ছিল।”
“এখন আমরা পরিকল্পনা করছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে অন্তত দুটি সেশন করানোর। গোটা দলের সঙ্গে তারা কথা বলবেন, প্রয়োজনে অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সেশনও করবেন। ক্রিকেটাররা কয়েকজন এখন দেশের বাইরে, ঢাকার বাইরে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই আমরা চেষ্টা করব। আইএসএসবি’র ওদের সঙ্গে কথা বলে সময় ঠিক করব।”
২০১১ বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় একজন মনোবিদ দলের সঙ্গে স্থায়ীভাবেই ছিলেন। পরেও নানা সময়ে মনোবিদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সেশন হয়েছে। স্থায়ী মনোবিদ রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হয়েছে নানা সময়েই।
এবার আইএসএসবি’র মনোবিদদের সহায়তা কেন নেওয়া হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করলেন জালাল ইউনুস।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
“ওখানে অনেক ভালো ভালো সাইকোলজিস্ট আছেন। তারা ক্যাডেটদের মানসিকতা নিয়ে অনেক স্টাডি করেন, বাছাই করার আগে। এটা অনেক বিশদ ব্যাপার, খুব ভালোভাবে জানেন তারা। আরেকটা বড় ব্যাপার, তারা ক্রিকেট খুব ভালোভাবে অনুসরণ করেন। প্রতিটি ক্রিকেটারকে তারা চেনেন, তাদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানেন, আমরা খুবই চমৎকৃত হয়েছি।”
“ক্রিকেটারদের সবার প্রোফাইল দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে। খালেদ মাহমুদ সুজন (বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর ও বিসিবি পরিচালক) ও ডা. দেবাশীষ চৌধুরি (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) গিয়ে তাদের সঙ্গে মিটিং করে এসেছে। আইএসএসবি খুবই আন্তরিকভাবে ও সানন্দে রাজি কয়েকটি সেশন করানোর জন্য।”
দুটি টেস্ট, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে সপ্তাহখানেক পরই তিন ভাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবে বাংলাদেশ দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের যা পারফরম্যান্স, বিশেষ করে মিরপুর টেস্টে যেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ, তাতে পরের সফর নিয়ে শঙ্কার কারণ আছে যথেষ্টই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গতবারের সফরে (২০১৮ সালে) সবুজ, বাউন্সি ও গতিময় উইকেটে ৪৩ রানে অলআউট হওয়াসহ বাজেভাবে পর্যদুস্ত হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারও একইরকম উইকেট ও কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা।
মিরপুর টেস্ট শেষেই জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি ও শীর্ষ বোর্ড পরিচালকরা। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, তা কিছুটা তুলে ধরলেন জালাল ইউনুস।
“কোচিং স্টাফদেরকে আমরা জানিয়েছি আমাদের পর্যবেক্ষণ। সফর বা সিরিজের মধ্যে তো বাড়তি কাজ করা যায় না, ফাঁকা সময়ে যেন করে। আমরা ওদেরকে বলেছি পরিকল্পনা করে আমাদের তা জানাতে, কীভাবে কাজগুলো তারা করবে।”
কোচিং স্টাফদের বলা হয়েছে, ক্রিকেটারদেরকে মাঠে নিয়মিত বার্তা পাঠিয়ে করণীয় মনে করিয়ে দিতে।
মানস্তাত্ত্বিক সমস্যা নিয়ে তো মনোবিদের সঙ্গে সেশন করা হবেই, স্কিলের ঘাটতি নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বললেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান।
“মানসিক সমস্যার সঙ্গে আমাদের মনে হয়েছে, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যাও আছে। আমি নাম উল্লেখ করছি না, কিন্তু দু-একজন ব্যাটসম্যান বারবার স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছে। বারবার করছে, এটার সমাধান কী? জানতে হবে এবং সময় নিয়ে কাজ করতে হবে।”
“ফাস্ট বোলাররা টানা ভালো জায়গায় বল রাখতে পারছে না। আলগা বল করেই যাচ্ছে, প্রচুর রান দিয়ে চাপ সরিয়ে নিচ্ছে। অ্যালান ডোনাল্ড বলল আমাদের বোলারদেরকে ওরা সব বলে দিচ্ছে কোন চ্যানেল ধরে বল করতে হবে, কিন্তু মাঠে গিয়ে তা করতে পারছে না। কেন পারছে না, এসব বের করে কাজ করতে হবে। তার পরও যদি না পারে, তাহলে অন্যদের কথা ভাবতে হবে। যাদেরকে দিয়ে হবে, তাদেরকে খেলাব আমরা।”
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ধরন বুঝে কাজ করা ও যোগাযোগের ঘাটতি দূর করার জন্য কোচিং স্টাফকে বলা হয়েছে বলে জানালেন জালাল ইউনুস।
“আরেকটা ব্যাপার হলো, বাইরে থেকে সবকিছু একবার বলে দিয়ে মাঠে পাঠালেই হবে না। বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো নয় আমাদের, উপমহাদেশের বাস্তবতা একটু ভিন্ন। স্রেফ ড্রেসিং রুমে বসে থাকলে চলবে না, খেলা চলাকালেও বারবার ম্যাসেজ পাঠাতে হবে। কোচদেরও সক্রিয় থাকতে হবে মাঠে। এসব আমরা তাদেরকে বলেছি।”
“আমরা বোর্ড, সবাই সবকিছু দিতে প্রস্তুত আছি যে কী লাগবে। দিচ্ছি এবং দেব, কিন্তু সমাধান তো তাদেরকেই করতে হবে এবং এখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে হবে।”