ক্যাটাগরি

ডলার সংকট: রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন যথেষ্ট?

বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি; এ পরিমাণ মজুদ কতটুকু পর্যাপ্ত, কতটুকুই বা থাকা দরকার- এ নিয়েও চলছে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।

টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলার বিক্রি বাড়ানো, ঊর্ধ্বমুখী বিশ্ববাজারে আমদানিতে বেশি ডলার ব্যয়, রেমিটেন্স আসায় ধীরগতি এবং বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড ঘাটতির এই সময়ে ৪২ বিলিয়ন রিজার্ভ কী নিরাপদ?

বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুদ বাঁচাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা কতটুকু কাজে আসবে? এসব নিয়েও চলছে নানান বিশ্লেষণ।

কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে এসব প্রসঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্নমত। কেউ মনে করছেন, এ পরিমাণ রিজার্ভ যথেষ্ট হলেও সামনের দিনগুলোতে সতর্ক থাকা দরকার। আবার কেউ মজুদ আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। অর্থনীতির গতিধারা বিশ্লেষণে দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শও এসেছে কারও কাছ থেকে।

উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মনে হয় না রিজার্ভ নিয়ে খুব সমস্যা আছে। আমাদের রিজার্ভ এখনও ৪২ বিলিয়ন ডলার আছে। এটা কিন্তু খারাপ না।

“আগের থেকে কিছুটা কমেছে। কিন্তু যা আমাদের রিজার্ভ আছে, এটা যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক।”

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করছেন, ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতে এ রিজার্ভ যথেষ্ট হলেও এখন তা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, “রিজার্ভের স্বস্তিটা নির্ভর করে, বৈদেশিক মুদ্রাটা যে ব্যয় হয় বিশেষ করে আমদানি পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে সেটা মেটানোর মত কত অর্থ রিজার্ভে আছে। এ নিয়ে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের পলিসি অ্যাডভাইস হল- স্বাভাবিক সময়ে তিন থেকে পাঁচ মাসের (আমদানি ব্যয়ের) রিজার্ভ হাতে রাখলে মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকে।

“কিন্তু মন্দা অবস্থায়- যখন বিশ্ব ও দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা চলছে- যেটা গত তিন বছর ধরেই একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- সেইক্ষেত্রে তাদের (আইএমএফ) হিসাব হল, আট থেকে ১২ মাসের (আমদানি ব্যয়ের) মত রিজার্ভ হাতে রাখা দরকার। কারণ অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে সেটা আগে থেকে বলা মুশকিল।”

রিজার্ভের ওঠানামা

আমদানি বিল বাবদ গত ১০ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৪১ বিলিয়নের ঘরে নেমেছিল; সেদিনের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

আকুর দেনা পরিশোধ এবং আরও কিছু অর্থ লেনদেনের ছয় কার্য দিবস পরে রিজার্ভে যুক্ত হয় আরও ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এতে গত ১৬ মে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত অর্থবছর শেষে ২০২১ সালের জুনে এই রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। পরের তিন মাসে তা আরও বেড়ে অগাস্টে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ০৬ ডলার, যা দেশে রিজার্ভে রেকর্ড।

কোভিড মহামারীর দুই বছরে দেশে আমদানি কমলে দেনা পরিশোধের পরিমাণও কমে। আর এসময়কালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়লে রিজার্ভে এমন উত্থান হয়।

২০২০ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। পরের ১৪ মাসে বাড়ে ১২ বিলিয়ন। সেখান থেকে চলতি বছর ১০ মে তা ৪১ বিলিয়নের ঘরে নেমে এখন আবার ৪২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।

কতদিন চলবে?

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “যদি পণ্য ও সেবা দুটোর ব্যয়ই ধরা হয় তাহলে আমাদের রিজার্ভ আছে পাঁচ মাসেরও কম।”

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিজার্ভ নিয়ে আমি চিন্তিত হওয়ার মত কিছু দেখছি না।

“আমাদের রিজার্ভ প্রথম যখন ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল তখন তো আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। ৩০ বিলিয়নে যদি খুশি হই, তাহলে ৪২ বিলিয়নে নেমে আসলে কষ্ট পাওয়ার কী আছে?”

সংকট যেখানে

আমদানি ব্যয় বিপুল বেড়ে যাওয়া এবং রেমিটেন্সে ধীরগতির কারণেই মূলত চিন্তার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

এরসঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও পরিবহন ব্যয় বাড়তে থাকা এবং ডলারের অতিমূল্য। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম ‘অস্বাভাবিক’ বেড়ে যাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলোকে। এসব কারণে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানির বিশাল ব্যবধান চাপ করেছে বেশি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এসময়ে আমদানি বিল পরিশোধ হয়েছে ৬৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

একই সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের নয় মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আর দেশে বৈদেশিক মুদ্রা যোগানের অপর বড় খাত প্রবাসী আয় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চের ৯ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

রেমিটেন্স কমে যাওয়াটাই বেশি ভাবাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকারও ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনতে প্রণোদনার পাশাপাশি নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।

এ হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে আমদানি খরচ হয়েছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। এসময় রপ্তানি ও রেমিটেন্স থেকে এসেছে গড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ফারাক থাকছে এক বিলিয়ন ডলারের।

এর বাইরে আরও ডলার ব্যয় হবে ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে; চলতি অর্থবছরে আনুমানিক ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার গুনতে হবে।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার নির্মাণ করা হচ্ছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার নির্মাণ করা হচ্ছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রিজার্ভে চাপ ফেলবে বিদেশি ঋণ?

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বিদেশি অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ছে, যা নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার দুরাবস্থার পর। তবে অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ‘রিটার্নের’ বিবেচনায় সরকারি নীতি নির্ধারক এবং অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এখনও আরও ঋণ নেওয়ার পক্ষে; দেখে শুনে, যাচাই করেই তা নেওয়ার পরামর্শ এসেছে তাদের কাছ থেকে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে নেওয়া ঋণের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী ও ঋণদাতা দেশ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছ থেকে মোট পাবে ৫৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ মনে করেন সরকারকে এদিকে কিছুটা নজর দেওয়া দরকার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে সবসময় ম্যাক্রো অর্থনীতি ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করে এসেছে। একসময় আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক কম ছিল। কিন্তু ইদানিং সেটা বেড়ে গেছে। এদিকে সরকারের অবশ্যই নজর দিতে হবে।”

বর্তমানের বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ১৩ শতাংশের মত, যা ‘স্বস্তিদায়ক’ বলে মনে করছেন কাজী খলীকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এটা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে না হলে এখানে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

“দ্বিতীয়ত আমরা যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করি সেটা আমাদের রপ্তানি আয়ের মাত্র সোয়া ৪ শতাংশ। এটা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে গেলে সমস্যা। সে হিসাবেও এটা বেশ স্বস্তিদায়ক।”

সঠিক পথে সরকার- কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা?

বাণিজ্য ভারসাম্য রেকর্ড বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

আমদানি নিরুসাহিত করতে কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্যে এলসি খোলায় মার্জিনের অনুপাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ‘ডলার’ বন্ডে বিনিয়োগের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে এবং কমানো হয়েছে সুদহার।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে ডলারের মূল্য বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে কয়েক দফায় ডলারের বিপরীতে তিনবার টাকার মান কমানো (৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ) হয়েছে।

একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর চেষ্টা করছে। চলতি অর্থবছরের ২৫ মে পর্যন্ত ৫৬০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। অথচ গত অর্থবছর বাজার থেকে ৭৭০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছিল।

পাশাপাশি চাহিদা কমাতে কিছু কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক করারোপ করা হয়েছে এবং বিদেশযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডলার বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।

আবার দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে রেমিটেন্স ও বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি এবং নিয়ন্ত্রণমূলকভাবে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটানোর পদক্ষেপের সমালোচনাও হচ্ছে।

রেকর্ড বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতির প্রসঙ্গে টেনে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রা বাজার দেখে বোঝা যায়, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটা ভারসাম্যহীনতা আছে।”

এটা মোকাবিলা করার অস্ত্র হিসেবে ডলার বিক্রি করে ‘কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার’ ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “এর ফলাফলটা কী? এর ফলাফল হচ্ছে রিজার্ভটা ফুরিয়ে যাবে।

“গোড়ার কারণ তো এখানে অ্যাড্রেস করছেন না। যোগানের যে ঘাটতি আছে- আমার কাছে ডলার আছে, আমি বিক্রি করে দিলাম। সেটা করে ততদিনই মূল্যটা ধরে রাখা যাবে যতদিন এ যোগানটা দেবেন।”

ড. জাহিদ বলেন, “কিন্তু গোড়ার কারণটা অ্যাড্রেসড হয় নাই। যখনই আপনি যোগান কমিয়ে দেবেন বাজারে আবার দাম বাড়া শুরু করবে। সেজন্য ওইটা কোনো টেকসই উপায় না। এই ধরনের ভারসাম্যহীনতা যদি সাময়িক হত তাহলে সাময়িক সময়ে যোগান দিয়ে মূল্যটা স্থিতিশীল রাখলেন।

“কিন্তু যেখানে সংকটটা দীর্ঘমেয়াদী, অদূর ভবিষ্যতে যেটার সমাধানের কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার কারণে। সেক্ষেত্রে শুধু যোগান দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না।”

কৃত্রিমভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নিয়ন্ত্রণ না করে চাহিদা কমানো অথবা যোগান বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইদানিং, যেখানে চাহিদা কমানোর পদক্ষেপ থাকছে।”

মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামীতে ডলারের চাহিদা কমে আসবে কিংবা যোগান বেড়েও যেতে পারে বিশেষ করে রেমিটেন্সের ওপর তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই বলে মনে করেন তিনি।

আর সরকার যেসব পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসিয়েছে, এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে এবং যেসব প্রকল্পে ডলারের চাহিদা বেশি সেগুলোতে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে- এগুলো বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমাতে সহায়তা করবে বলেও ধারণা তার।

জাহিদ হোসেন বলেন, “আবার আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যটা যখন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে- সেটা হয়তো এবছর হবে- তখন কৃচ্ছতার এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসা যাবে। যতদিন এ সংকট আছে ততদিন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং (ডলারের) যোগান বাড়াতে হবে।

“তবে কৃত্রিমভাবে মূল্য নিয়ন্ত্রণ বা ডলার বিক্রি করে নয়। কারণ ডলার ফুরিয়ে গেলে শ্রীলঙ্কার মত হয়ে যেতে হবে।”

তবে ‘চিন্তিত’ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “আমদানি বেড়েছে মেশিনারিজ, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যের। এগুলোর আমদানি বাড়লে চিন্তিত হওয়ার কী আছে? বিনিয়োগ হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হবে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়লে তো দেশের বাজারেও কিছু বাড়বে।

“ডলারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে বাড়ছে আমাদের সমন্বয় করতে হচ্ছে। সে সমন্বয়টা একটু ধীরে করছি, যাতে মূল্যস্ফীতির চাপটা বেশি না হয়। সেটা সামাল দেয়ার জন্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে কিছুটা বাজারে ছাড়ছি। রিজার্ভ কিছুটা কমেছিল, সেটা আবার বেড়েছে।”

বিআইডিএসের সাবেক এই গবেষক মনে করেন, ১০ মাসের রপ্তানি উর্দ্ধমুখী ধারায় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

“আর রেমিটেন্স শুধু গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে কমে গেছে। কিছু শুধু গত বছরের সঙ্গে কেন তুলনা হবে? ওইটা বিশেষ বছর। করোনার কারণে হুন্ডি টোটালি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন বেশি আসছে। তার আগের যে কোনও বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এটা ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।

মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকই আছে বলে মনে করছেন কাজী খলীকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “তবে আমাদের সতর্কতার দরকার আছে। সতর্কতা সরকার ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। বিলাসদ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি মনে করি না যে আমরা খুব একটা খারাপ দিকে যাব। এটা ম্যানেজ করে ফেলা যাবে।”

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আবু তালেব]

আরও পড়ুন

রিজার্ভ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
 

‘একই দরে’ ডলার কেনাবেচা করবে ব্যাংক
 

ডলারের বিপরীতে আরও কমল টাকার মান
 

ফের কমানো হল টাকার মান, ডলারের বাজার লাগামহীন
 

ডলার বাঁচাতে আমদানি আরও কঠিন করল বাংলাদেশ ব্যাংক
 

লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি
 

যুদ্ধের বাজারে চড়ছে ডলার, চড়তে পারে আরও
 

চড়ছে ডলার: বাগে আনার চেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যাংক
 

কাজের গতির সঙ্গে ঋণ ছাড়েও গতি