ক্যাটাগরি

রিফাত হত্যা: হাই কোর্টে মিন্নির জামিন আবেদন

দুয়েক দিনের মধ্যে
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে
মিন্নির আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে এই জামিন আবেদন
করা হয়। তার আইনজীবী শাহীনুজ্জামান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা
শুনানির জন্য আদালতে মেনশন স্লিপ জমা দিয়েছি। যখন সিরিয়ালে আসবে, তখন এ বিষয়ে আমাদের
শুনানি করার সুযোগ হবে।”

২০১৯
সালের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়
রিফাতকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয়
আলোচনা।

সেই
ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার
স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা
করছেন।

ওই
ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা
মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের
ছাত্রী মিন্নিকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়।

রিফাত
হত্যার ঘটনা বরগুনা শহরে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ দৌরাত্মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। এইসব
কিশোর তরুণের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার খবর গণমাধ্যমে এলে হত্যার কারণ নিয়ে
নানামুখী আলোচনা চলতে থাকে। 

মিন্নি সে
সময় হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর
নাম বলেন। ২ জুলাই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের
সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এদিকে
মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুললে আলোচনা নতুন
মোড় নেয়। ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে
দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সেদিন রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার
দেখানো হয়।

পরদিন
আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয়
দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তরুণী হাকিমের
কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তবে
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর অভিযোগ করেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’
মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয়
প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তিনি সে সময় দাবি করেন। পরে ২৯ অগাস্ট হাই
কোর্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে।

হত্যাকাণ্ডের
দুই মাসের মাথায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বরগুনার আদালতে
মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই খণ্ডে বিভক্ত ওই
অভিযোগপত্রের এক অংশে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়। অন্য অংশে রাখা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক
১৪ জনের নাম।

২০২০
সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান প্রাপ্তবয়স্ক ১০
জনের বিচারের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়
আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়, বাকি চার আসামি বেকসুর খালাস পান।

মৃত্যুদণ্ড
পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে
রাব্বি আঁকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক
হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ছয় আসামির সবাইকে ৫০ হাজার
টাকা করে জরিমানা করা হয়।

রায়ের
পর নিয়ম অনুযায়ী মিন্নিসহ ছয় আসামির
মৃত্যুদণ্ড অনুমোদেনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নথি আসে হাই কোর্টে। এরপর একই বছরের ৬ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস
চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন মিন্নি।

সে সময় হাই কোর্ট তার আপিল গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের রায়ে ৫০ হাজার টাকার
অর্থদণ্ড আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে।  

আরও পড়ুন-


খালাস চেয়ে হাই কোর্টে মিন্নির আপিল

রিফাত হত্যা: মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে স্ত্রী মিন্নির আপিল গ্রহণ
 

মিন্নিসহ ৬ আসামির ‘ডেথ রেফারেন্স’ হাই কোর্টে
 

কারাগারে ‘ভালো নেই’ ফাঁসির আসামি মিন্নি: পরিবার
 

রিফাত শরীফ হত্যা: স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ আসামির ফাঁসির রায়