প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২
প্রকল্পের আওতায় জেলার নয় উপজেলায় সেমিপাকা এসব ঘর নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
চলতি বছরের নভেম্বরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের এক হাজার ৪৭০টি পরিবারকে আগামী বছরের জানুয়ারির
মধ্যেই এসব ঘর জমিসহ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
উপকারভোগীদের এই সংখ্যা
আরও বাড়তে পারে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,
মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সব ঘর করতে মোট খরচ হচ্ছে প্রায়
২৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০
ফুট বাই ২২ ফুটের প্রতিটি ঘরে থাকবে দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, একটি শৌচাগার ও সামনে
খোলা বারান্দা।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল
সরকার শনিবার সকালে সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নে একটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় নির্মাণাধীন মুবিবর্ষ ভিলেজে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন সালথার ইউএনও মোহাম্মদ হাসিব সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি
এই সময় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ
হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহারস্বরুপ এসব আশ্রয়স্থল করে
দিচ্ছেন। এই কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত
নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
উপকারভোগীর সংখ্যা আরও
বাড়তে পারে বলে জানান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
এই সময় ফরিদপুর প্রেসক্লাব
সভাপতি কবিরুল ইসলাস সিদ্দিকীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীনদের জন্য নির্মিত স্বপ্ননীড়
ফরিদপুরের সদর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা মাসুম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নিবিড় তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে
আশ্রয়হীন মানুষের এসব স্বপ্নের ঠিকানা ‘স্বপ্ন নীড়’।
তিনি জানান, স্থানীয় সংসদ
সদস্যগণসহ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণও সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি
তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণও।
উপকারভোগীদের একজন রাশেদ
খাঁ (৭০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার নিজের কোনো ঘর নেই। স্ত্রী, এক ছেলে
ও এক মেয়ে নিয়ে গট্টি ইউনিয়নের ঝুনাখালীতে পরের জমিতে পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে টং ঘর তুলে
থাকেন। এখন এই ঘর পেলে নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
একই কথা বললেন একই এলাকার
শেখ মোসলেম (৭৫), মো. আবুল কালাম (৫৫), বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের দেলাননগরের
লাল মিয়ার স্ত্রী সাকিরননেসা (৬৫), নগরকান্দার কোদালিয়া শহীদনগর গ্রামের শেখ মোজাম
(৬৫), লিপি বেগমসহ (৫৩) অনেকেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সালথা
উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে সড়কের পাশে খাস জমিতে একটি ‘মুজিববর্ষ ভিলেজ’-এ কাজ চলছে।
ফরিদপুরের সদরপুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন আবাসনের কাজ তদারক করছেন সদরপুর ইউএনও পূরবী হালদার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল চন্দ্র শীল
শুক্রবার সাতসকালে খবর
সংগ্রহে সেখানে গেলে দেখা গেছে, খুব ভোরেই সেখানে কাজের তদারকি করতে চলে এসেছেন সালথা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা
খান হীরামনি।
এই প্রকল্পের কাজ নিয়মিত
তদারকি করছেন বলে জানান মাঠ প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে
ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের প্রাপ্ত তথ্য তারা স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিশ্চিত
হন; পরে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করেছেন। আর নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার
জন্য নিয়মিত তদারকি করছেন তারা।
নগরকান্দা উপজেলার সহকারী
কমিশনার (ভূমি) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, এমন ঘরে পড়ে যাওয়া গৃহকর্তা, স্বামী পরিত্যক্তা
নারী, হতদরিদ্র বিধবা কিংবা পরের বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে জীবন চালানো পরিবারগুলোকে এখানে
বাছাই করা হয়েছে উককারভোগী হিসেবে। এদের নিজের কোনো জমিজমা বা সম্পদ নেই।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান বলেন, সুবিধাভোগীদের এসব ঘরসহ জমি দলিল করে দেওয়া হবে। প্রতিটি
পরিবার এতে গড়ে প্রায় তিন শতাংশ করে জমি পাবে ঘরসহ।
জেলা প্রশাসন জানায়, গৃহহীনদের
এই প্রকল্পের আওতায় জেলার সদর উপজেলায় ২৯২টি, ভাঙ্গায় ২৫০টি, আলফাডাঙ্গায় ২২০টি, সদরপুরে
১৭৮টি, চরভদ্রাসনে ১৫০টি, মধুখালীতে ১৪৮টি, নগরকান্দায় ১০৫টি, বোয়ালমারীতে ৯২টি ও সালথা
উপজেলায় ৩৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।