সোমবার ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।
কিন্তু এ দিন ফরিদ মামলার কেস ডকেট দাখিল না করায় ১৫ জুন তা দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন বিচারক জাকির হোসেন।
ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ শামসুল হক বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওই তারিখে কেস ডকেট দাখিল না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন বিচারক জাকির হোসেন।
কেস ডকেট হলো মানচিত্র, সূচিপত্র, রাষ্ট্রপক্ষের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নথিসহ অন্যান্য কাগজপত্র।
এর আগে ফরিদকে কেস ডকেট জমা দিতে আদালত বেশ কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল আলম বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৫ সালের ২ জুন ফরিদ উদ্দিন পিপি অফিস থেকে এ মামলার কেইস ডকেট নেন।
“এরপর থেকে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফরিদ উদ্দিন এ মামলার কেউ না। তিনি পুলিশের ডিসিকে দেখানোর জন্য কেইস ডকেট নিয়ে গিয়েছিলেন পরে আর তা ফেরত দেননি।“
সোমবারও কেস ডকেট দাখিলে ফরিদ ব্যর্থ হন জানিয়ে তিনি বলেন, “বিচারক তাকে কেস ডকেট খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলা হয়েছে। এ মামলার জব্দ করা মালামালও মালখানা থেকে গায়েব হয়ে গেছে, যা না পেলে বিচারকাজ ব্যাহত হবে।”
এ বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সে কেন নিল, সেটা রহস্যজনক। এটা একটা চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলাটাকে নষ্ট করার জন্য বা যারা আগ্রহী ছিল মামলাটার প্রতি, তারাই হয়ত এমন কাজটা করিয়েছে। সুতরাং এটা খুঁজে বের করা উচিৎ।”
ডকেট তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও নানা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ফরিদ উদ্দিনও। তিনি এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। এতদিন আগের ঘটনা, আমার মনে পড়ছে না। আমি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও না।”
এদিকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার আসামি আশীষ রায় চৌধুরী সোমবার জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত ৫ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে আশীষকে (৬৩) মাদকসহ গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। পরে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অন্য আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আশীষ চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, আদনান সিদ্দিকী, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ও ফারুক আব্বাসী।
ওই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে।
এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে। তারপর বিচারিক আদালতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে এই তারকা দম্পতি বিয়ে করেন।