সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘এডিপি বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্য: এসডিজি-৬ অর্জনে একটি বাধা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) নিয়ে বাজেট-পূর্ব আলোচনায় প্রতিবেদনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) তুলনা করে তিনি বলেন, “এমডিজিতে মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল ৯৮ ভাগের।
“কিন্তু এসডিজিতে লক্ষ্যে বলা হচ্ছে পানির ব্যবস্থা শুধু নয়, পানি হতে হবে নিরাপদ। ২০২১ সাল পর্যন্ত নিরাপদ পানি পাচ্ছে ৫৯ শতাংশ মানুষ।”
ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন হোসেন জিল্লুর বলেন, “এমডিজিতে স্যানিটেশনের কথা বলা হয়েছিল, যাতে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ প্রায় বন্ধ করতে পেরেছে।
“তবে, এসডিজির লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন। ১০০ ভাগের মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে ৩৯ ভাগ। শহরাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ, মাত্র ৩৪ ভাগ। গ্রামে ৪২ শতাংশ।”
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার আর আট বছর বাকি আছে উল্লেখ করে এই সময়ের মধ্যে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের লক্ষ্য অর্জন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “এমডিজির অর্জনের পথ ধরে আমরা এটা এমনিতে করে ফেলব, তা হবে না। এক্ষেত্রে নতুন বরাদ্দ ও নতুন নীতি ও মনোযোগ লাগবে।”

বরাদ্দ বেশি ওয়াসার জন্য, চার ওয়াসাতেও বড় তফাৎ
পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি- এডিপি বরাদ্দের বেশির ভাগই চারটি শহরের ওয়াসার জন্য রাখা হয়েছে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “মোট বরাদ্দের ৪ হাজার ৯৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতে। এতে অন্যান্য অঞ্চলের জন্য সমভাবে বরাদ্দ সেভাবে না হওয়ার কথাই তুলে ধরে।”
কোভিড সংকট নিরসনে এ বিষয়ে অ্যাডভোকেসি ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে বরাদ্দ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোভিড মহামারী গেলেও স্যানিটেশন ও হাইজিনের বরাদ্দ বেশি করে রাখা দরকার।”
২০২০-২১ অর্থবছরে চার ওয়াসার বরাদ্দের মধ্যে ৬১ ভাগই গেছে ঢাকা ওয়াসার ঘরে। আর খুলনা ওয়াসা সবচেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে, যা মাত্র ৩ শতাংশ।
বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে দেরির কারণে ঢাকা ওয়াসার জন্য এডিপি বরাদ্দে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে বলে জানান হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “ওয়াশ খাতে এডিপি বরাদ্দে ঢাকা ওয়াসার প্রাধান্য এবং এর বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়গুলো স্পষ্ট। ওয়াশে এডিপি বরাদ্দের অধিকতর ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সুশাসনের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।”
এসময় দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় পাঁচ বছরের বরাদ্দের চিত্র তুলে ধরেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এসব এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি বছরে তা কমে এসে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ হয়েছে।
নিম্ন মাত্রার বরাদ্দ এসডিজি অর্জনে নীতি বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটা সরকারের একটি নারীবান্ধব পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, সরকার এবারের বাজেটেও তা অব্যাহত রাখবে।”
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ইউনিসেফ এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।