অনেক প্রত্যাশার ডালি সাজিয়ে ২০১৩ সালে টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে রিয়ালে যোগ দেন বেল। প্রথম মৌসুমেই তিনি বুঝিয়ে দেন, কেন তাকে ওই সময়ের সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফার ফি (১০ কোটি ইউরো) দিয়ে দলে টেনেছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি।
২০১৩-১৪ মৌসুমে দুটি শিরোপা জিতেছিল রিয়াল। উভয় প্রতিযোগিতার ফাইনালে দুর্দান্ত খেলা বেল গোলও করেছিলেন।
বার্সেলোনার বিপক্ষে স্মরণীয় কোপা দেল রে ফাইনালে অসাধারণ একটি গোল করেছিলেন বেল। অনেকের মতে, সেটা রিয়ালে বেলের ক্যারিয়ারের সেরা গোলগুলোর একটি।
আর ওই মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতায় ছিল। অতিরিক্ত সময়ে বেলের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৪-১ গোলে জেতে রিয়াল।
ক্লাবটির হয়ে আরও দারুণ কিছু অর্জনের সাক্ষী হয়েছেন বেল। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নন্স লিগ জয়।
২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে শুরুর একাদশে না থাকলেও বদলি হিসেবে নেমে ব্যবধান গড়ে দেন বেল। লিভারপুলকে হারানোর পথে ওই ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি, যার একটি ছিল চোখ ধাঁধানো ওভারহেড কিকে।
চার বছর পর লিভারপুলের বিপক্ষেই গত শনিবারের ফাইনালে বেল ছিলেন স্রেফ দর্শক। স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি সাকুল্যে খেলেছেন কেবল ৭ মিনিট। দুটিই বদলি হিসেবে।
রিয়ালে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও তিনটি লা লিগা সহ আরও কয়েকটি শিরোপা জিতেছেন বেল।
সবশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মাত্র ৭টি ম্যাচ খেলেন বেল। জালের দেখা পান মাত্র এক বার। সব মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে ২৫৮ ম্যাচে বেলের গোল ১০৬টি। অ্যাসিস্ট ৬৭টি।
২০২১-২২ মৌসুমে চুক্তির মেয়াদ শেষে রিয়াল ছাড়বেন বেল, সবকিছু আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বুধবার বিদায়ী বার্তায় বেল লিখেছেন, রিয়ালের জার্সি গায়ে চাপিয়ে তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
“৯ বছর আগে তরুণ বয়সে আমি এখানে (রিয়ালে) এসেছিলাম, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। ঐতিহ্যবাহী এই সাদা জার্সি পরতে, বুকে ক্লাবটির ক্রেস্ট ধারন করতে, সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে খেলতে এবং শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম। ক্লাবটির ইতিহাসের অংশ হতে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে চেয়েছিলাম।
“আমি এখন পেছনে ফিরে তাকিয়ে মন থেকে বলতে পারি যে এই স্বপ্ন ও আরও অনেক কিছু বাস্তব রূপ হয়েছে।”
রিয়ালের হয়ে নিজের অর্জনে দারুণ গর্বিত বেল।
“এই ক্লাবের ইতিহাসের অংশ হতে পারা এবং রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে যত কিছু জিতেছি, সত্যিই অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। আমি কখনই ভুলব না।”
“আমাকে এই ক্লাবে খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেস, জোসে আনহেল সানচেস এবং বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একসঙ্গে আমরা এমন কিছু মুহূর্ত তৈরি করতে পেরেছি যা এই ক্লাব এবং ফুটবলের ইতিহাসে চিরকাল অম্লান থাকবে।”
শুরুর বছরগুলোতে রিয়ালের আক্রমণের বড় ভরসা হয়ে ওঠা বেলের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় একের পর এক চোট। তার পেশাদারিত্ব ও দলের প্রতি দায়বদ্ধতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে এই সময়ে।
মাঝে এক মৌসুম ধারে পুরোনো দল টটেনহ্যামে খেলে রিয়ালে ফেরেন তিনি। কিন্তু নিজেকে আর পুরনো রূপে ফেরাতে পারেননি ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ফলে তার দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনা কেবলই জোরাল হয়েছে।
গত কয়েক মৌসুমে রিয়াল সমর্থকদের তো বটেই, স্প্যানিশ গণমাধ্যমেরও আক্রমণের বিষয়বস্তু ছিলেন বেল। গত মার্চে বার্সেলোনার বিপক্ষে রিয়ালের ৪-০ গোলে হারের পর বেলকে ‘পরগাছা’ আখ্যা দেয় স্প্যানিশ মিডিয়া।