তাসকিনের সেই স্বপ্ন দেশকে জেতানো নিয়ে। ক্যারিয়ারের দিশাহীন অধ্যায়টা পেছনে ফেলে তিনি হয়ে উঠেছেন তিন সংস্করণেই বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর দুয়েকে বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটের উন্নতিটাও চোখে পড়ার মতো। বিসিবিতে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাসকিন বললেন, পেস বোলিং দিয়ে তারা টেস্ট জেতাতে চান দলকে।
“আত্মবিশ্বাস থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব হয়ে যায়, আল্লাহর রহমত ও চেষ্টা থাকলে। একদিন বাংলাদেশকে ফাস্ট বোলাররাও ম্যাচ জেতাবে, এগুলোই স্বপ্ন দেখি ঘরে বসে। চেষ্টা করছি, সবাই অনেক পরিশ্রম করছি। একসময় আমরাও টেস্ট জেতাব। হয়তো এই কথা শুনলে হাসিও লাগতে পারে, তবে একদিন এই কথা সত্যি হবে।”
পেস বোলিংয়ে টেস্ট জেতানো এমনিতে স্বপ্নের মতো কোনো ব্যাপার হওয়ার কথা নয়। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা বিরল। এই বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দলের জয় বড় ভূমিকা রাখেন ইবাদত হোসেন। আর ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়েতে একটি টেস্ট জয়ে অবদান ছিল দুই পেসার রবিউল ইসলাম ও জিয়াউর রহমানের। এই তো!
এই স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে নামতে তাসকিনকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। চোটের কারণে আপাতত তিনি দলের বাইরে। গত এপ্রিলের শুরুর দিকে কাঁধের চোট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি প্রথম টেস্টের পর। সেই চোট তাকে ভুগিয়েছে অনেক। অস্ত্রোপচার করানোর শঙ্কাও ছিল। বিশেষজ্ঞ দেখাতে তাকে লন্ডনে পাঠায় বিসিবি। শেষ পর্যন্ত আর অস্ত্রোপচার লাগেনি, ধীরে ধীরে ‘কনজারভেটিভ’ উপায়ে তাকে সুস্থ করে তোলার পথ বেছে নেওয়া হয়।
চোট কাটিয়ে ফিট হওয়ার লড়াইয়ে লম্বা সময় পর বুধবার বোলিংয়ে ফিরলেন তাসকিন।
ফেরার সেই লড়াইয়ে তিনি বড় এক ধাপ এগিয়ে গেলেন বুধবার। পুনবার্সনের একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া শেষে বোলিংয়ে ফিরলেন লম্বা সময় পর। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরের পাশের নেটে ছুটলেন তিনি বল হাতে। অনুশীলন শেষে তার কণ্ঠে ফুটে উঠল বোলিংয়ে ফেরার উচ্ছ্বাস।
“খুব ভালো লাগছে, স্বস্তিও লাগছে। যদিও লো-ইনটেনসিটিতে শুরু করেছি, তবে অনেক দিন পর বোলিং শুরু করেই আমি খুশি। আজকে অনেক দিন পর বোলিং করলাম, ৮ ওভার।”
“একা একা রিহ্যাব করাটা অনেক বিরক্তিকর। ক্রিকেটার হিসেবে বাইরে বসে খেলা দেখাও অনেক কষ্টের। আজকে বোলিং করতে পেরে ভালো লাগছে।”
চোট-আঘাত তার জন্য নতুন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগে থেকেই চোটের সঙ্গে লড়াইয়ের জীবন তার। ছোট-বড় নানা চোট ছোবল দেয়, তিনি মুষড়ে পড়লেও ভেঙে পড়েন না। আবার ফিরে আসেন কঠিন সব প্রক্রিয়া পার হয়ে। এই চ্যালেঞ্জেই এখন তিনি খুঁজে নিয়েছেন আনন্দ।
“ইনজুরি তো জীবনের অংশ। দুনিয়ার সব ফাস্ট বোলারের কম-বেশি ইনজুরি হয়ে থাকে। এটা হবে, আবার ফিরে আসতে হবে। এটাই চ্যালেঞ্জ, এটাই মজা।”
নানা সময়ে অনেকবারই তাসকিন বলেছেন, বোলার হিসেবে তার আদর্শ মাশরাফি বিন মুর্তজা। চোটের সঙ্গে লড়াইয়েও তিনি প্রেরণা মানছেন সেই মাশরাফিকেই।
“ইনজুরি যে কারও হতে পারে। হাতে আছে কেবল প্রক্রিয়া ও শৃঙ্খলা রাখা। এগুলোই চেষ্টা করতে পারি। নিয়ন্ত্রণে যেসব আছে, ওসবকেই আরও ধারালভাবে করতে চাই। স্বপ্ন তো সবসময়ই তিন ফরম্যাটে নিয়মিত খেলার। কিন্তু ইনজুরির বাধা মাঝেমধ্যে আসবে, এটাই জয় করতে হবে।”
“আমাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণ মাশরাফি ভাই, তিনিও অনেক ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে খেলেছেন। এসব দেখার পর আমরা তরুণ ফাস্ট বোলাররা অনুপ্রাণিত হই যে ইনজুরি হবেই, ফিরে আসতে হবে।”
চোটাঘাত তার নিত্য সঙ্গী হলেও ২৭ বছর বয়সী পেসার এখনই কোনো একটি সংস্করণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চান না।
“এখনও আমি যথেষ্ট তরুণ, তিনটি ফরম্যাটেই খেলতে চাই। যখন আরেকটু সিনিয়র হব, অনেক চাপ পড়বে, তখন বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে যে কোনটা খেলতে হবে, কোনটা খেলতে হবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি তিনটি সংস্করণেই খেলতে চাই, নিজেকে ওভাবেই তৈরি করতে চাই।”
এই মাসের মাঝামাঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজের দলে নেই তাসকিন। তবে ওয়ানডে সিরিজের দলে তাকে রাখা হয়েছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার কথা আগামী ১০ জুলাই।