কোতোয়ালি থানার এসআই মো. ইয়াসিন জানান, মঙ্গলবার রাতে নগরীর আমানত শাহ মাজার থেকে হারিয়ে যায় সাদিয়া নামের শিশুটি। জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে বুধবার বিকালে নগরীর বদর শাহ মাজার থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাদিয়াকে তার মা ছেনুয়ারা বেগমের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য।
সাদিয়াদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পুরান পল্লান পাড়ায়। তার বাবা মাদক মামলায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে মেয়েকে নিয়ে মা ছেনুয়ারা মঙ্গলবার টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। চট্টগ্রামে কোনো আত্মীয় স্বজন না থাকায় মেয়েকে নিয়ে রাতে তিনি আশ্রয় নেন কারাগারের কাছে আমানত শাহ মাজারে।
সাদিয়া, তার মা ছেনুয়ারা বেগম এবং কোতোয়ালি থানার এসআই মো. ইয়াসিন
ক্লান্ত মা ঘুমিয়ে পড়লে শিশুটি খেলতে খেলতে মাজার থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যায় বলে জানান এসআই ইয়াসিন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেছিলেন ছেনুয়ারা। থানা এলাকায় ডিউটি করার সময় রাতেই তিনি সেই খবর পান।
এরপর জেল রোডের বিভিন্ন পয়েন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখার পাশাপাশি বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন, হাসপাতালসহ নানা জায়গায় খোঁজ নেওয়া শুরু হয়।
এসআই ইয়াসিন বলেন, আমানত শাহ মাজারের সিসিটিভি ভিডিওতে রাত পৌনে ২টার দিকে অন্য এক নারীর পেছনে পেছনে হেঁটে সাদিয়াকে মাজার থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
কিন্তু এর পরের অংশে আর কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় সেই ভিডিও থেকে ছবি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশ পথে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়।
বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পুলিশের কাছে খবর আসে, সেখানে এক নারী ও শিশুকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় হারিয়ে যাওয়া শিশুটি ও হাসপাতাল এলাকার শিশু এক নয়।
কোতোয়ালী থানার নারী ও শিশু ডেস্কে দায়িত্বরত নারী কনস্টেবল নুসরাতের সঙ্গে শিশু সাদিয়া
ইয়াসিন জানান, তিনি রেলস্টেশনেও খোঁজ করেন। বিভিন্ন ট্রেনের বগি এবং আশেপাশের ছিন্নমূল লোকজনকে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেও মেয়েটির হদিস মিলছিল না।
এরপর ছেনুয়ারাকে থানায় নিয়ে মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করানো হয়। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে বুধবার স্বামীর সাথে দেখা না করেই ছেনুয়ারা টেকনাফে ফিরে যান।
খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বুধবার সকালে জেল রোডের বিভিন্ন পয়েন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শিশুটিকে এক নারীর পেছনে হাঁটতে দেখা যায়।
ইয়াসিন বলেন, “ওই সূত্র ধরে খুঁজতে খুঁজতে গতকাল (বুধবার) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বদর শাহ মাজারে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি এক মহিলার পাশে বসে পানি খাচ্ছে।”
বদর শাহ মাজার এলাকার লোকজন জানান, শিশুটিকে তারা ভোর থেকে মাজারে ঘুরতে এবং ঘুমাতে দেখেছিলেন। বিকালে পানির পিপাসা পেলে এক নারী তাকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন।”
এরপর পুলিশ বদর শাহ মাজার থেকে সাদিয়াকে উদ্ধার করে থানায় এক নারী কনস্টেবলের হেফাজতে রাখে। টেকনাফ থেকে ছেনুয়ারা বেগম এলে মেয়েকে তার কোলে তুলে দেওয়া হয়।
তিন বছর আগে টেকনাফ থেকে ছেনুয়ারার আরেক মেয়ে হারিয়ে যায়। তাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি জানিয়ে ছেনুয়ারা বেগম পুলিশকে বলেছিলেন, সাদিয়াকে না পেলে ‘আত্মহত্যা’ করা ছাড়া তার আর পথ থাকবে না।