ক্যাটাগরি

৫ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে, আশায় বেনাপোলের ট্রাকচালক

নারায়ণগঞ্জ থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব পদ্মা সেতু হয়ে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা পারের বিড়ম্বনায় এক রাত তো লাগেই, প্রায়ই দুই দিনের বেশি লেগে যায়।

ট্রাকচালকরা জানান, মাঝেমধ্যে চার দিনেও পৌঁছানো যায় না। ঢাকা শহরে দিনে ট্রাক চলা নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রায়ই ভোরের দিকে পদ্মা পার হতে পারলেও সারাদিন তাদের বসে থাকতে হয় রাতের অপেক্ষায়।

তাই পদ্মা সেতু তাদের চোখে স্বপ্ন ধরার সমান।

বেনাপোলের ট্রাকচালক রুবেল হোসেন (৩০) বলেন, “সেতু চালু হলি বাঁইচে যাতাম। ১৫ মিনিটে নদী পার হতি পারতাম। ঘাটে চার-পাঁচ দিন ধরে বসে থাকতি হত না। ফেরিঘাটে বসে থাকতি ভাল লাগে না।”

রুবেল বেনাপোল থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার বা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পথে পদ্মা পার হন।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার পথে প্রায়ই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি পার হতে হয়। কিন্তু সেখানেও প্রায়ই স্বচ্ছন্দে ফেরি পার হওয়া যায় না।

রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কখনও নাব্য সংকট, কখনও বেশি স্রোত, কখনও ঘাটে যানজট। সারা বছর একটা না একটা বিপদ লেগেই থাকে।

“পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় একটি পণ্যচালান পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছে দেওয়া যাবে। এতে পরিবহন শ্রমিক, মালিক, কারখানা মালিক বা আমদানিকারক সবারই লাভ।”

রপ্তানির ও আমদানির কাঁচামাল পরিবহন করেন বেনাপোলের ট্রাকচালক আসলাম হোসেন। তার বক্তব্য অন্যান্য চালকের মতই।

তিনি বলেন, “ট্রাকে কাঁচামাল তুললে দিনের দিন পৌঁছে দিতে হয়। ফেরি পারের রাস্তায় এ জাতীয় মালামাল বহনে খুব রিস্ক। তাই যমুনা সেতু হয়ে যেতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বাড়ে। আমাদেরও খুব কষ্ট হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর কাঁচমাল নিয়ে গিয়ে আবার রপ্তানির মাল নিয়ে দিনে দিনে বেনাপোল ফিরতে পারব।”

দীর্ঘপ্রক্ষীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

সেতু চালুর অপেক্ষায় রয়েছেন এসব জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, তারা মনে করছেন সেতু চালু হলে বন্দরে কাজের গতি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

তিনি বলেন, পদ্মাপারের ঝক্কিতে সময়মত পণ্য পৌঁছানো যায় না; বেড়ে যাও ভাড়া বাবদ খরচও।

“সেতু চালু হলে অনেক ব্যবসায়ী জলপথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বদলে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।”

এতে মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বাড়তে পারে বলে অনেক মনে করেন।

পাঁপড়ি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমিন বলেন, বেনাপোল বন্দর থেকে অনেক জরুরি আমদানি পণ্য ঢাকায় এবং চট্রগ্রামে পাঠাতে হয়। যানজট ও ফেরি সংকটে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ফেরিঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

এছাড়া পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত থাকায় বিবিআইএন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত এবং পণ্যবাহী যান চালু হলে বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।

বেনাপোলেরর মানি চেঞ্জার আবুল বাশার বলেন, “আমরা শতভাগ বিশ্বাস করি বেনাপোল বন্দর দিয়ে আগের চেয়ে পর্যটক যাতায়াত ও আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আসা-যাওয়া বাড়বে। তাই মানিচেঞ্জার ব্যবসারও প্রসার ঘটবে।”

যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন পদ্মা সেতু বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, যশোর অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় যাবে। তাছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোলের গুরুত্ব আরও বাড়বে।

“এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য রাজধানীতে দ্রুত বাজারজাতকরণের ফলে কৃষক ঠিকঠাক দাম পাবে আশা করা যায়।”

এছাড়া পদ্মা সেতুর ফলে যশোরাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের।