ক্যাটাগরি

নিখোঁজের ৫ মাস পর ১৬ ফুট বালু খুঁড়ে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

বৃহস্পতিবার সিরাজদিখানের বোয়ালখালীর বিসিক এলাকার একটি
বালুর মাঠ থেকে ৩৪ বছর বয়সী এ সোনা ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে বুধবার কেরানীগঞ্জ ও সাভারের বিভিন্ন স্থান থেকে
অনুপের ব্যবসায়িক অংশীদার নয়ন মণ্ডল (২৬), নয়নের কাকাতো ভাই রিপন মণ্ডল (৩২), তাদের সঙ্গী দিলীপ রায় (৩৪) ও
পীযূষ করাতিকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের গ্রেপ্তার এবং লাশ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে
ঢাকার ধানমণ্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পিবিআইর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। 

তিনি বলেন, “মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে অনুপ বাউলকে হত্যার পরিকল্পনা
করেন তার অংশীদার নয়ন মণ্ডল। হত্যাকাণ্ডের পর নয়নের কাকাতো ভাই রিপন মণ্ডল তার
নিজের এক্সক্যাভেটর দিয়ে বিসিক এলাকায় মাটি খুঁড়ে লাশ পুঁতে রাখে।

“ঢাকা জেলা পিবিআই’র এসআই সালেহ ইমরানে নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল
লেগে থেকে ওই বিস্তীর্ণ বালুর মাঠের মধ্যে লাশের অবস্থান চিহ্নিত করেন এবং আবারও
এক্সক্যাভেটর দিয়ে খুড়েই লাশ উদ্ধার করতে হয়।”

নিখোঁজ অনুপ বাউল

নিখোঁজ অনুপ বাউল

আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত
মহাপরিদর্শক বনজ বলেন,
পাওনা টাকা নিয়ে অনুপ ও নয়নের মধ্যে বিরোধ ছিল। গত ৪ জানুয়ারি পাওনা টাকা পরিশোধ এবং মাদারীপুরে স্বর্ণের অর্ডার পৌছে দেওয়ার
কথা বলে কেরানীগঞ্জের জয়েনপুর এলাকায় রিপন মণ্ডলের গ্যারেজে অনুপকে ডেকে নিয়েছিলেন
নয়ন।

“অনুপ সেদিন সিরাজদিখানে
শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। গ্যারেজে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন রিপন,
পীযূষ ও দিলীপ। সকাল ১০টার দিকে অনুপ গ্যারেজে আসার পর তাদের সঙ্গে এক দফা ঝগড়া
হয়। পরে চারজন মিলে গ্যারেজের খাটের মধ্যে ফেলে কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধে অনুপকে হত্যা
করে। এরপরে তারা লাশটি একটি ড্রামে ভরে রাখে।

“বেলা তিনটার দিকে স্থানীয় অধীরের
অটোরিকশায় করে তারা লাশটি বিসিক এলাকায় বালুর মাঠের কাছে নিয়ে যায়। ড্রাম রেখে অটোচালক
চলে গেলে অভিযুক্তরা ড্রামটিকে বালুর মাঠের ভিতরে নিয়ে কাদাযুক্ত একটি স্থানে
পুঁতে ফেলে। লাশ পোতা শেষে নয়ন তার প্রতিবেশী পিংকুর বাসায় গিয়ে গোসল করেন।”

অনুপের স্বজনেরা জানতেন,
নয়নের
সঙ্গে অনুপ স্বর্ণের অর্ডার পৌঁছে দিতে মাদারীপুরে
গেছেন। তার খোঁজ না পেয়ে স্বজনেরা তাই বারবারই নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন।
কিন্তু অনুপের সঙ্গে সেদিন দেখাই হয়নি বলে স্বজনদের সাফ জানিয়ে দেন নয়ন। স্বজনদের
সঙ্গে মিলে তিনিও অনুপকে খুঁজতে থাকেন।

ঘটনার পর পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা নয়নকে ডেকে নিয়ে
জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি কিছুই বলেননি বলে জানান তদন্তকারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিষয়টি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় সিরাজদিখান থানা পুলিশের পাশাপাশি
র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও পিবিআই মুন্সীগঞ্জ জেলা তদন্ত শুরু করে। ঘটনার
এক মাস পর পিবিআই কর্মকর্তাদের পরামর্শে নিহতের ছোটভাই বিপ্লব বাউল এ ঘটনায়
কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন।

থানা পুলিশ তিন মাস তদন্তের পর বিষয়টি উদঘাটন করতে না পেরে
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই ঢাকা
জেলা। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই সালেহ ইমরানকে। তদন্তভার পেয়ে ইমরান প্রথমে
রিপন ও অটোচালক অধীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর গোয়েন্দা সূত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার
করে রিপনের যোগসাজশ নিশ্চিত হয় পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে রিপনই লাশের অবস্থান দেখিয়ে
দেন। পরে এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে বালু খুড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়।