জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, বাঁধের ওপর ও ভেতরে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি স্থানের ব্লক ধসে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা জজ, ডিআইজির বাসভবন সংলগ্ন এলাকাগুলোও ভাঙনের মুখে পড়েছে। হাসপাতালঘাট, বড় বাজারের কালী বাড়ি, ডেল্টাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্লক ধসে নদীগর্ভে চলে গেছে।
“রুজভেল্ট জেটি এলাকায় অসংখ্য ব্লক দেবে গেছে, কিছু অংশে ফাটলও ধরেছে। অনেক স্থানে বাঁধের কোনো অস্তিত্বই নেই।”
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্লক সরিয়ে গর্ত করে তৈরি করা হয়েছে দোকানপাট। জেলখানা ঘাট থেকে কালি বাড়ি ঘাট পর্যন্ত বাঁধের ওপর ইট-বালু রেখে অনেকেই ব্যবসা করছেন।
কালী বাড়ির বাসিন্দা হাবিবুর রহমান, রিয়াজ উদ্দিন ও সত্যনারায়ণ সাহা বলেন, নির্মাণের পর বাঁধটির কোনো সংস্কার হয়নি। কয়েকটি স্থানে ব্লক ছাড়া কিছুই নেই।
তারা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ স্থানে বাঁধ দখল হয়ে গেছে। এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাঁধের ওপর দোকান, আড়ৎ, হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। আধাপাকা কাঁচাঘরের অনুমোদন নিয়ে দোতলা, তিনতলা ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করা হচ্ছে। নৌকা-ট্রলার, লঞ্চ ভিড়িয়ে মালামাল ওঠানো-নামানোয়ও বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘যথাযথ ভূমিকার অভাবে’ খুলনা শহররক্ষা বাঁধ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছর আগে নির্মিত বাঁধটি সংস্কারের অভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ (রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘সেকেন্ডারি টাউন ইন্টিগ্রেটেড ফ্লাড প্রোটেকশন’ প্রকল্পের আওতায় খুলনা শহররক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০০ সালে।
তিনি বলেন, কিছু জায়গায় খারাপ হলেও বাঁধটি এখনও ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসভবনসংলগ্ন এলাকায় ৫২৫ মিটার জায়গায় তীর সংরক্ষণের জন্য বোর্ডের কাছে কারিগরি কমিটি করার জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। রুজভেল্ট জেটি এলাকার জন্যও একই কমিটি করার জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
বাঁধের ওপর অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “অনেকদিন ধরে এগুলো বেদখল হয়ে আছে। ইচ্ছা করলেই ভেঙে ফেলা সম্ভব না।”