বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ভোক্তা অধিকারের এই নাগরিক
সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম এই প্রস্তাব
তুলে ধরেন।
বিশ্ববাজার থেকে চড়ামূল্যে এলএনজি আমদানি, ইউরিয়া সারের উৎপাদন ব্যয়
নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ বিভিন্ন কারণে গ্যাসের বিদ্যুমান বিতরণ মূল্যের চেয়েও পণ্যমূল্য
বেড়ে গেছে বলে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। আর বিদ্যুতের দাম মানুষের ক্রয়
ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এই খাতেও উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও কম মূল্যে তা বিতরণ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শুরুতে গ্যাসের দাম ৬৩ শতাংশ বাড়াতে বাংলাদেশ
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পেট্রোবাংলা। বিদ্যুতের বিদ্যমান
পাইকারি মূল্য প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৫৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার
প্রস্তাব দেয় পিডিবি। দাম বৃদ্ধি না করলে সরকারকে এই দুই খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা
ভর্তুকি দিতে হবে বলে কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।
ক্যাবের প্রস্তাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, ভুল নীতি
ও অযৌক্তিক পরিচালন ব্যয়সহ বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি কমিয়ে ও নীতি কৌশলনের পরিবর্তন
করে উৎপাদন ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আমরা
কাদের জন্য ভর্তুকি দেবো সেই টার্গেট নির্ধারণ করা আছে। যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থায় জ্বালানি
এবং বিদ্যুতের দাম ঠিক রাখায় অনেক দেশই খুব হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী
বিদ্যুৎ জ্বালানির যে খরচ আসে, তা বহন করার মতো তাদের ক্যাপাসিটি তৈরি হয় নাই। সরকার
এখানে ভর্তুকি দেয়, কারণ এটা একটা ইনভেস্টমেন্ট। ইনভেস্টমেন্ট এই কারণে করে যে, পরিমাণ
ইউটিলিটি উনি সেভ করবে, ওই পরিমাণ অর্থটা যেন তার নিজের বিষয়ে ব্যয় করতে পারেন।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন, বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন,
“গার্মেন্টস শিল্পের যে কাঁচামাল তা আমরা সরবরাহ করে
থাকি। এই সেক্টরে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট ১৫ বিলিয়ন ডলার, আরও আড়াই বিলিয়ন ডলার পাইপলাইনে
আছে।
বাংলাদেশের এই সেক্টর ৮৫ শতাংশ সুতা এখন স্থানীয়ভাবে তৈরি করতে পারে।
কিন্তু এই খাতের মিলগুলি বিদ্যুৎনির্ভর।
“এখন গ্যাসের খরচ যদি এখন বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমাদের
কস্ট অব প্রোডাকশন বেড়ে যাবে, যার জন্য তৈরি পোশাকের দামও বেড়ে যাবে। কস্ট অব প্রোডাক্ট
যদি বেড়ে যায়, তখন বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কিনতে চাইবে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক বদরুল ইমাম,
২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে যে গ্যাসের সংকট দেখা যাচ্ছে সেই ঘাটতি পূরণ করতে এলএনজি
আনা হলো। এখন এলএনজি আনার ফলে গ্যাসের বাড়তি একটা মূল্য মানুষের কাঁধে এসে পড়লো।
“আমাদের টোটাল যে গ্যাস সাপ্লাইয়ের ৭৫ শতাংশ আসে দেশীয়
উৎপাদন থেকে। বাকি ২৫ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে। এলএনজির ৫ শতাংশ আসে আবার স্পট মার্কেট
থেকে। এখন স্পট মার্কেটের অতিমূল্যের কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।”
এলএনজির নিয়মিত মূল্য প্রতি ইউনিট ৫ ডলার হলেও বিশ্ববাজারে এ্খন পণ্যটি
২৫ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, “যদি
মার্কেটে মনোপলি থাকে, সিন্ডিকেট থাকে, তাহলে প্রাইস ন্যায় সঙ্গত হবে না। আপনি যদি
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আপনাকে সরকারের ইন্টারভেনশন মেনে নিতে
হবে। কারণ আপনি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিলে, এটার মূল কথা হবে, যার টাকা আছে সে কিনবে,
যার নাই, সে কিনবে না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করবো না। কিন্তু দায়িত্বশীল সরকার হলে
এমন একটা প্রাইস দিতে হবে, যাতে টার্গেট গ্রুপগুলো কিনতে পারে।”
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের
সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ক্যাবের প্রণয়ন করা বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি
(প্রস্তাবিত) শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।