তারা অভিযোগ করেছেন, পেশাজীবীদের বাদ রেখে তাদের কাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের
দিয়ে চালানো হচ্ছে।
তাদের আশ্বস্ত করে মন্ত্রী কাদের বলেছেন, তিনি পেশাজীবীদের সব কথা প্রধানমন্ত্রী
ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেবেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে (আইইবি) পেশাজীবী সমন্বয়
পরিষদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই মতবিনিময় সভা হয়।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী নূরুল হুদা বলেন, “ইঞ্জিনিয়ার্স
ইন্সটিটিউশনের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চেয়ে চারটা চিঠি দিয়েছি,
কিন্তু একটি অদৃশ্য দেয়াল সেটা বন্ধ করে রেখেছে।”
আমলাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এখন
যদি ডিসিরাই সমস্ত বাংলাদেশের কাজ করে, তাহলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের মেডিকেল
কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেন। আজকে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ ডিসিদের দিয়ে করাচ্ছেন।
আজকে একটা পদ্মা ব্রিজের মধ্যে রড কতটুকু লাগবে সেটা কি পদ্মা ব্রিজের পিডি শফিক জানবে?
না মুন্সীগঞ্জের ডিসি বলবে।
“আজকে সমস্ত কাজ ডিসিদের হাতে দিয়ে প্রকৌশলীদের দূরে
সরিয়ে রেখেছেন। আমার সমস্ত বাংলাদেশের ১ লাখ প্রকৌশলী করোনাভাইরাসের মধ্যে কাজ করেছি,
আর তাদের দূরে সরিয়ে দিয়ে ডিসিদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিকার চাই।”
পেশাজীবীদের দূরে সরিয়ে রাখলে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলেও
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে হুঁশিয়ার করে দেন প্রকৌশলী হুদা।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ
তালুকদার বলেন, “শিক্ষকদের কিছু জিনিস জানলে আপনি
অবাক হয়ে যাবেন। আমাদের বেসরকারি শিক্ষকরা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালও হতে পারবে না,
সরকারি কলেজ থেকে ডেপুটেশনে দায়িত্ব নিয়ে এসে বসবেন।
“গত তিন বছরে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একদিনের জন্যও
আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি, বসেননি। তিনি সমস্ত শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে দিলেন।
আমরা জানিও না। আমাদের বাদ দিয়ে কি কারিকুলাম তিনি করলেন, আর চালাবেন, তিনিই জানেন।”
আন্দোলনের হুমকি দিয়ে এই শিক্ষক নেতা বলেন, “আজকে
আমলাতন্ত্র, যারা মন্ত্রণালয়ে আছেন, তারা আমাদের বিড়ালের মতো মনে করে, যারা মন্ত্রণালয়ে
আছে। আজকে ২০০ টাকা থেকে শতভাগ বেতন পাচ্ছি, সেটা এমনি এমনিতেই নয়, বাঘের মতো হুঙ্কার
দিয়ে পেয়েছি।”
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক বলেন, “আমার
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন জামায়াত-বিএনপির অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ
বিশেষ করে সিভিল সার্জন, পরিচালক এবং অন্যান্য পদে প্রসাশন ক্যাডারে আশীর্বাদপুষ্ট
কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, যারা আমাদের চেতনাকে লালন করে না।”
সংসদে পেশাজীবীদের অংশীদারিত্বও দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, “এমন
সকল লোকদের স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা মেডিকেলের একটা বইয়ের নামও
উচ্চারণ করতে পারে না।”
পেশাজীবীদের ক্ষোভের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন খুবই
চ্যালেঞ্জিং একটা সময় আমরা পার করছি। সব খানে অস্থিরতা, ইউক্রেইনের যুদ্ধের কারণে সবাই
বিষয়টা মর্মে মর্মে বুঝতেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো একজন
ডায়নামিক নেতা পেয়েছি। তিনি জেগে আছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমুতে পারে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ সীমিত থাকার
কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আপনাদের দূরে সরিয়ে দেননি। সময়মতো তিনি
আপনাদের সঙ্গে বসবেন। আপনাদের ক্ষোভ শুনবেন। আমি সব মনোযোগ দিয়ে শুনেছি, আমি মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব স্পষ্ট করে বলব।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আওয়ামী
লীগের অফিসে এখন প্রচুর ভিড়। আর সেই ভিড় আওয়ামী লীগ নেতাদের নয়, সেখানে যারা যায় তাদের
বেশিরভাগই চাকরির প্রার্থী অথবা ট্রান্সফার নিয়ে তদবির করতে আসে। দলীয় লোক কম আসে।”
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ
হোসেন হুমায়ুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, স্বাচিপের
সভাপতি ইকবাল আর্সলান চৌধুরী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ডা. কামরুল ইসলাম,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন শীবলু, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী,
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল নূর দুলাল বক্তব্য রাখেন।