ক্যাটাগরি

দক্ষিণ এশিয়াকে চালিত করছে বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব: দোরাইস্বামী

শনিবার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দুই দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, “আমরা সীমান্ত ইস্যু সমাধান করেছি, সমুদ্র সীমানা সমাধান করেছি।

“আমাদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সব সময় অনেক অগ্রাধিকার পায়। আমরা বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পেয়েছি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা রয়েছে।”

এসব বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এমন একটা পর্যায়ে এসেছি যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব কেবল দুটি দেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র অঞ্চলকে চালিত করতে শুরু করেছে।”

তিনি জানান, ব্যবসার নতুন সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যার সমাধান হওয়ায় রেল এবং আকাশপথে বাণিজ্য বেড়েছে এবং তরুণরা একে অপরের দেশে পড়তে যাচ্ছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিচ্ছে। 

এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অবদান ও ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন বিক্রমকুমার দোরাইস্বামী।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় আমাদের স্মরণ করতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা যখন ভারতে ছয় বছর নির্বাসিত ছিলেন, তখন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্থানীয় অভিভাবক ছিলেন।

“প্রণব মুখার্জি আজকে নাই, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল আজীবন।”

দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক অটুট রেখে ভারত সব সময় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে জানান ভারতীয় হাই কমিশনার।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, জাতির ক্রান্তিলগ্নে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট ছিল।

তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্প্রীতি, এটা অনেকটা আত্মার বন্ধন রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের ইতিহাস একটা উপাখ্যানের মত। যেখানে ছিলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা, সেখান থেকে ওনারা দুই বোন নির্বাসিত হলেন।

“যে ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করেছিল, সেই ভারতেই কিন্তু ৫-৬ বছর তিনি কাটালেন।”

দেশে ফিরে আসার পরের পর্বের ইতিহাস তুলে ধরে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, “যখন ফেরত আসলেন, এয়ারপোর্ট থেকে ৩২ নম্বর বাড়িতে তাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান।

“তখন তারা দুই বোন মিলে রাস্তায় বসে বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করেছিলেন। এভাবে তারা স্বাধীনতায় যারা অগ্রদূত তাদেরকে অপমান করেছে।”

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশকে সামনে এগুতে দেবে না।

“আজকে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ওই শক্তি আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করত হবে।”

বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা স্লোগান দেয় পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। আমাদের ছাত্ররা অনেক ধৈর্যশীল, আমরা এই সময় ছাত্র থাকলে কী করতাম, তা জানি না। তবে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করত হবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত মেত্রী সমিতির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ এই বাঙালিদের জন্য তাকে জীবিত রেখেছেন।

“আজকে উনি আছেন বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল বানিয়েছেন।”

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,  “আজকে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব ঘোষণায় বলেছেন, চুয়াত্তরের মতো অবস্থা হবে। আমার প্রশ্ন, চুয়াত্তর সালের দুর্ভিক্ষ কারা করেছিল?

“তারা তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল, তার সরল বিশ্বাসের কারণে। আজকে আবারও তারা ষভড়যন্ত্র শুরু করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি, প্রচার সম্পাদক সাইফুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।