১৮২ বছর আগে শুরু হওয়া সেই চা বাগান টিকেছিল প্রায় ৩৫ বছর। সেই পাইওনিয়ার চা বাগানের ম্যানেজারের বাসভবন এলাকাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম ক্লাব।
ব্রিটিশ ভারতে আঠার শতকের শুরুতে প্রথম চা চাষ শুরু হয় আসামে। এরপর ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষের শুরু হয়, যা পরে বাগানে রূপ নেয়।
১৯০৮ সালে প্রকাশিত ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্সে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের সেসময়ের কালেক্টর স্কোনস আসাম থেকে চায়ের বীজ ও কলকাতার বোটানিকাল গার্ডেন থেকে চায়ের চায়না চারা সংগ্রহ করেন। এসব বীজ ও চারায় তিনি গড়ে তোলেন পাইওনিয়ার চা বাগান।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনার বোর্ড থেকে জানা যায়, মি. স্কোনস ১৮৪০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের কালেক্টর ছিলেন। তিনিই পাইওনিয়ার চা বাগানের গোড়াপত্তন করেন। যা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথম চা চাষ।
“ইস্টার্ন বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্সে যে ২২টি চা বাগানের উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে পাইওনিয়ার চা বাগানের নামও রয়েছে।”
সেই পাইওনিয়ার চা বাগানের পুরোটাই ছিল পাহাড়ি এলাকা। এখনও টাইগার পাস ও লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় আছে।
চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি ও পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাদের খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রামের পাইওনিয়ার চা বাগানেই বাংলাদেশের প্রথম চা চাষ।
“বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব এলাকাটি ছিল পাইওনিয়ার চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলো। চারপাশে যেসব পাহাড়, সেগুলো নিয়েই ছিল চা বাগানটি।”
বাংলাদেশ চা সংসদের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম ক্লাব ও আশেপাশের এলাকাতেই ১৮৪০ সালে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। এটাই বাংলাদেশে প্রথম চা চাষ।”
১৮৪০ সালে যাত্রা শুরু করা পাইওনিয়ার চা বাগানের পাতা থেকে প্রথম চা বানানো হয় তিন বছর পর ১৮৪৩ সালে।
১৮৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম ক্লাব। ক্লাব প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত ওই বাগানে চা উৎপাদন হয়েছিল।
দেশে চট্টগ্রামের পর সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। পরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ভ্যালির অধীন চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি জেলায় মোট চা বাগান আছে ২৩টি।
২০২১ সালে দেশে ৯ কোটি ৬৩ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে চট্টগ্রাম ভ্যালির বাগানগুলোতে হয় মোট ৯৫ লাখ কেজি।