স্কুল
ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে প্রথমবার আলোচনার জন্ম দেওয়ার পর বয়সভিত্তিক ক্রিকেট রাঙানোর
সময় থেকেই শান্তকে মনে করা হতো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ। যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ
রানের যে বিশ্ব রেকর্ড তিনি গড়েছিলেন, তা টিকে আছে এখনও। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর হাই
পারফরম্যান্স, ইমার্জিং দল ও ‘এ’ দলের মতো নানা ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দলে এসেছেন তিনি।
অনেক যত্ন নিয়ে গড়া হয়েছে বলে তার প্রতি আশাও বেশি দেশের ক্রিকেটের।
কিন্তু
প্রত্যাশার প্রতিদান তিনি দিতে পেরেছেন সামান্যই। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার থমকে
আছে ৮ ও ৬ ম্যাচেই। পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। টেস্টে তাকে নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু ১৭ টেস্ট খেলে ২ সেঞ্চুরিতে স্রেফ ৮২৮ রান করেছেন মাত্র ২৬.৭০ গড়ে।
তিন নম্বরের
মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং পজিশনে খেলেন বলেই হয়তো তার ব্যর্থতাও চোখে লাগে বেশি করে।
সিডন্স তার কথা টেনে আনলেন টপ অর্ডারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গেই।
শ্রীলঙ্কার
বিপক্ষে সবশেষ মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসেই ধসে পড়েছে টপ অর্ডার। বেশ কিছু দিন ধরেই এরকম
ধস বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে হয়ে উঠেছে নিত্য। সামনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ।
সেখানে বাউন্সি ও গতিময় উইকেট হলে চ্যালেঞ্জটা হবে আরও কঠিন। কতটা সামলাতে পারবে বাংলাদেশের
ভঙ্গুর টপ অর্ডার?
মিরপুরে
শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ব্যাটিং কোচ সিডন্স বললেন, নতুন বল নিয়েই মূল শঙ্কা।
সেখানেই তিনি অন্যদের সঙ্গে টেনে আনলেন শান্তর প্রসঙ্গ।
“মূল
হুমকি তো নতুন বল। নতুন বলে ব্যাটিংয়ে আমাদের আরও ভালো করতে হবে। মুমিনুল ফর্মে ফিরলে
দারুণ হয়। আমি জানি, শান্ত খুব ভালো ক্রিকেটার। আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, শান্ত
আসলেই খুব ভালো। ওর ফর্মে ফেরা প্রয়োজন আমাদের জন্য। আমাদের উদ্বোধনী জুটি চট্টগ্রাম
টেস্টে যেভাবে খেলেছে, সেরকম কিছু প্রয়োজন।”
“তামিম
ও মুশফিক ভালো ফর্মে আছে, কাজেই ভালো কিছু হতে পারে বলে মনে হয়। তবে ২০ রানে ৫ উইকেট,
২০ রানে ৪ উইকেট, এসব থামাতে হবে আমাদের। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। সম্ভবত অনেক
দিন থেকেই এটা আমাদের সমস্যা। নিশ্চিত করতে হবে যেন সমাধান বের করতে পারি।”
কিছুদিন
আগে কোচিং স্টাফদের বরাতে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছিলেন, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে
বারবার বাংলাদেশ ভেঙে পড়ছে, কারণ দুই টেস্ট কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় টানা ১০ দিন ভালো করার
সামর্থ্য এই দলের অনেকের নেই। জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ড সফর, মার্চ-এপ্রিলে দক্ষিণ
আফ্রিকা সফরে এটা দেখা গেছে। বিসিবি সভাপতির কথার পরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে প্রথম
টেস্টে এগিয়ে থেকে ড্র করার পর দ্বিতীয় টেস্টে বাজেভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ।
সিডন্স
এখানে ঘাটতি দেখছেন দলের তরুণ ক্রিকেটারদের। সেখানে তিনি শান্তর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন
আবার, বললেন তরুণদের আরেকটু সময় দিতে।
“মুশফিক,
লিটন, এমনকি তামিম… তামিম টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছে বেশ আগে, তবে এখনও তার সামর্থ্য
আছে এটা করার। মুশফিক তো এই সিরিজেই করে দেখাল। লিটন দুই টেস্টেই পারফর্ম করেছে। এসবই
প্রমাণ যে এটা সত্যি নয়।”
“তবে
তরুণদের কাছ থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স প্রয়োজন এখন। সিনিয়ররা জ্বলে উঠছে, তরুণদের
এগিয়ে আসা উচিত এখন। জয়কে নিয়ে ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত ২-৩ বছর ধরে খেলছে, তবে এখনও
তো মোটে ১৭ টেস্ট খেলেছে। ওদের নিয়ে তাই আমাদের সময় আছে। সিনিয়রদের পারফর্ম করে যেতে
হবে।”
টানা
ব্যাটিং ধসের পেছনে টেকনিক্যাল সমস্যার চেয়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে না পারাকেই মূল
কারণ মনে করেন ব্যাটিং কোচ।
“স্রেফ
চাপের কারণে (ধস হচ্ছে)। এই সময়টা (নতুন বলে) ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন। ইংল্যান্ডে চলতি
টেস্ট ম্যাচের দিকে যদি তাকান, দুই দলের ক্ষেত্রেই এটা হয়েছে। এরকম হয়েই থাকে, খেলাটাই
এমন। নতুন বলের ব্যাটিং, দিনের শেষ ঘণ্টায় নতুন বল খেলা, এসব সবসময়ই কঠিন।”
শ্রীলঙ্কা
সিরিজ শেষে ক্রিকেটাররা বিশ্রাম ও ছুটিতে থাকায় ভুলগুলি নিয়ে কাজ করার সময় পাননি সিডন্স।
তবে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। পাশাপাশি বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে এসব নিয়ে
নিবিড়ভাবে কাজ করার কথাও।
“আমরা
মানসিকভাবে শক্ত থাকা নিয়ে কথা বলেছি, টেকনিক নিয়ে কথা বলেছি। মারার বল না পেলেও মেরে
দেওয়া যাবে না। আমরা যেমন দেখেছি জয়কে গোটা দুই আলগা শট খেলতে (মিরপুর টেস্টে)। এই
ধরনের শট খেলা যাবে না। চাপে পড়ে একটা রানআউট হয়েছে, যেটা উচিত নয়। এই ধরনের ছোট মুহূর্তগুলো
পরের ব্যাটসম্যানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।”
“আমাদের
নিশ্চিত করতে হবে যেন এসব দূর করতে পারি। নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রতিপক্ষ উইকেট আদায়
করে নেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেলে ছেলেদের এটাই বলব আমি, প্রতিপক্ষকে উইকেট অর্জন করে নিতে
দাও। ভালো ক্রিকেটার আছে আমাদের, কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা ছোটখাটো ভুল করি, এসব বন্ধ
করতে হবে।”