গ্রেপ্তার নারীর নাম বিবি কুলসুম ওরফে কুনসু। ৪৫ বছর বয়সী এ নারীর বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার নোয়ারবিলা ইউনিয়নে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্বচ্ছল কুলকুম যে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে শহরে যেতেন, সেটাও তার এলাকাবাসীর ধারণায় ছিল না। তারা জানত, মঝে-মধ্যে শহরে গিয়ে থাকেন তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায়, কুলসুম চট্টগ্রাম নগরীতে এসে নিজেকে অসহায় হিসেবে তুলে ধরে গৃহকর্মীর কাজ নেন উচ্চবিত্ত পরিবারে। কিছু দিন থেকে সেখান থেকে চুরি করে ফিরে যান গ্রামে। কাজ নেওয়ার সময় নিজের আসল নাম-ঠিকানাও তিনি দেননি।
নগরীর ঘাটফরহাদবেগের যে বাড়িতে সর্বশেষ চুরির অভিযোগে কুলসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেখানে তিনি নাম উল্লেখ করেছিলেন হাসিনা বেগম, ঠিকানা দিয়েছিলেন বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়ন।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ৩ নভেম্বর ঘাটফরহাদবেগ এলাকার এক বাসিন্দা তার বাসা থেকে ৫০ ভরি অলঙ্কার ও নগদ দুই লাখ চুরি হয়েছে বলে থানায় মামলা করেন। এজন্য তিনি তার গৃহকর্মীকে দায়ী করেন।
টানা দেড় মাস তদন্ত শেষে ওই গৃহকর্মীকে গত ১৭ ডিসেম্বর লোহাগাড়া উপজেলার নোয়ারবিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, তার নাম বিবি কুলসুম।
গ্রেপ্তার কুলসুম বেগম
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আইয়ুব উদ্দিন জানান, গত বছরের নভেম্বরে বাকলিয়া থানার তুলাতলি এলাকায় ভিক্ষুকের বেশে একটি বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন কুলসুম। কোনো স্থানে কাজ নিয়ে চলে যাবেন জানালেও সে বাসায় প্রায় তিন মাস ছিলেন।
নিজের কাছে মোবাইল সিম থাকলেও যোগাযোগের জন্য কুলসুম ওই বাসা থেকে একটি সিম খুঁজে নেন। সেটি দিয়ে তিনি পরিবারের লোকজন বাদে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
লকডডাউন শুরুর কিছু দিন পর কুলসুম ওই বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন এবং অক্টোবরের শেষ দিকে আবার এসে থাকতে চান। কিন্তু সে বাসায় জায়গা না পেয়ে পাশের আরেকটি বাসায় সাবলেট হিসেবে থাকতেন।
এসআই আইয়ুব বলেন, “তুলাতলিতে যে বাসায় থাকতেন, তাদের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ঘাটফরহাদবেগের বাসাটিতে কাজ নেন কুলসুম। আর যে মহিলার মাধ্যমে ঘাটফরহাদবেগের বাসাটিতে কাজ নিয়েছিলেন, তাকে জানিয়েছিল স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।”
কুলসুমকে ধরতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের বাকলিয়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ঠিকানা শনাক্ত করতে হয়েছে।”
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা
ওসি মহসিন জানান, কুলসুমকে গ্রেপ্তারের সময় তার বাড়ি থেকে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
“ধরে আনার পরও সে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। স্বর্ণালঙ্কারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানের নাম উল্লেখ করে। কিন্তু আমাদের তদন্তে এবং ওই সব দোকান মালিককে জিজ্ঞাসাবাদে সেগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে।”
গত ১৮ ডিসেম্বর কুলসুমকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এসময় তার বাড়ি থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ উদ্ধার করা হয়।
ওসি মহসিন বলেন, “চুরি করা টাকা, স্বর্ণালঙ্কার বাড়ির খাটের নিচে এবং বিভিন্ন হাড়ি পাতিলে রেখেছিলেন তিনি।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের কাজ কুলসুম আরও ঘটিয়েছে বলে তার আচরণে মনে হচ্ছে। কিন্তু ধূর্ত কুলসুম অনেক বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছেন।”
পুলিশ জানিয়েছে, কুলসুমের স্বামী থাকেন সৌদি আরবে, আর ছেলে থাকেন দুবাইয়ে।