স্নায়বিক নানান সমস্যার মধ্যে ‘মাইগ্রেইন’য়ের
সমস্যাই সম্ভবত সবচাইতে বেশি দেখা যায়। সবচাইতে তীব্র মাথাব্যথা সৃষ্টি করে ‘মাইগ্রেইন’
যা পাশাপাশি বাড়ায় স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
নিউ ইয়র্ক নিবাসী ভারতীয় বংশদ্ভূত স্নায়ুবিদ ডা. শেয় দত্ত জানান, নারীদের এই রোগ বেশি
হয়। বিশ্ব জনগোষ্ঠির প্রায় ১৭ শতাংশ নারী এতে আক্রান্ত। তবে পুরুষরাও পিছিয়ে নেই, ৭
শতাংশ পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত।
তবে পুরুষ রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হতে
পারে কারণ অধিকাংশই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না, সহ্য করে নেয়।
মাইগ্রেইন মেয়েদের রোগ তকমা দেওয়া থেকেই
সমস্যার সৃষ্টি। যে কারণে লক্ষণ থাকলেও অনেক পুরুষ রোগী কিংবা চিকিৎসক তাকে মাইগ্রেইন
ভাবেন না, অন্য কোনো রোগের কথা চিন্তা করেন।
সচেতনতা বাড়ানো জন্য জ্ঞান বাড়াতে হবে,
রোগের লক্ষণ চিনতে হবে।
হরমোন
যে হরমোন নারীর শরীরে বেশি থাকা উচিত
তা পুরুষের শরীরে বেশি হয়ে যাওয়া সঙ্গে মাইগ্রেইনের সম্পর্ক আছে।
যেসব পুরুষের মাইগ্রেইনের সমস্যা আছ তাদের
হরমোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, শরীরে ‘এস্ট্রাডায়ল’ হরমোন বেশি আর ‘অ্যান্ড্রোজেন’ হরমোন
কম।
‘এস্ট্রাডায়ল’ হল মেয়েলী হরমোন ‘ইস্ট্রোজেন’য়ের
একটি ধরন আর ‘অ্যান্ড্রোজেন’ হল পুরুষালী হরমোন।
একমাসে যদি কারও ১৫ বার মাথাব্যথা হয়,
এর কারণে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলো করতেও সমস্যা হয় তবে দ্রুত মাইগ্রেইন বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ নিতে হবে।
মাথাব্যথার সময় বুঝে ঘুমানো
মাইগ্রেইনের আক্রমণ নজরে রাখার জন্য স্মার্টফোনভিত্তিক
অ্যাপ আছে। এদের যে কোনো একটি ব্যবহার করে ঠিক কী কারণে আক্রমণ হয় তা বোঝার চেষ্ট করতে
হবে।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন
আনা আবশ্যক এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে। ঘুমের অভ্যাস উল্টোপাল্টা হওয়া যাবে না। প্রতিদিন
একই সময়ে ঘুমাতে হবে এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
তেল দিয়ে চিকিৎসা
ঘরোয়া যে টোটকগুলো মাইগ্রেইনের ব্যথা
কমায় সেগুলো জানা জরুরি।
যেমন- ঘাড় আর মাথায় জোড়ের অংশের ‘ল্যাভেন্ডার
অয়েল’ আর ‘পিপারমেন্ট’ প্রয়োগ করলে ব্যথা কমে।
ডা. দত্ত জানান, ‘আকুপাংচার’ এই রোগের
তীব্রতা সামলাতে উপকারী। ‘মাইগ্রেইন’য়ের ব্যথা থেকে সৃষ্টি হওয়া বমিভাব দূর করতে আদা
অত্যন্ত কার্যকর।
ব্যথা নিয়ে জীবনযাপন সহজ করতে উপকারী
ভূমিকা রাখে যোগব্যায়াম। চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক কিছু ভিটামিন সেবন করা যায় যা মাইগ্রেইনের
ব্যথা সারাতে বিশেষভাবে কার্যকর।
খাবারের বিধিনিষেধ
১০ শতাংশ রোগী মাইগ্রেইনে আক্রান্ত হওয়ার
কারণ হয় খাবার। আর খাদ্যাভ্যাস এই ভূমিকা রাখে।
তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে
হবে। আর কিছু খাবার বাদ দিতে হবে।
ইস্ট মিশ্রিত বেইক করা খাবার, চকলেট,
টকদই, লেবুজাতীয় ফলের শরবত, শুকনা ফল, কলা, রাস্পবেরি, পেঁপে, অ্যাভোকাডো, বাদাম, সয়া,
টমেটো, পেঁয়াজ, মটরশুঁটি, ভিনিগার ইত্যাদি মাইগ্রেইনের আক্রমণ ডেকে আনে।
পনির ভালো নয়
ডা. দত্ত বলেন, “পনিরে থাকা ‘টায়রামিন’
একটি প্রাকৃতিক প্রোটিন। পনির যত পুরানো ততই এই উপাদানের মাত্রা বাড়ে পনিরে।
আর এই উপাদান মাইগ্রেইনের আক্রমণের কারণ।
ব্লু, ব্রি, চেডার, ফেটা, মোৎজারেল্লা, পার্মেজান, সুইস- এই ধরনের পনিরগুলোতে ‘টায়রামিন’য়ের
মাত্রা বেশি থাকে।
মানসিক চাপ কমান, পানি পান করুন
দুশ্চিন্তা মাইগ্রেইনের ব্যথা ডেকে আনে।
ধ্যান, গান শোনা, যোগব্যায়াম, মালিশ ইত্যাদি আরাম দেবে।
হুট করে রক্তে শর্কারার মাত্রা যাতে কমে
না যায় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কারণে এতে তাৎক্ষণিক মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু
হতে পারে।
আর প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ গ্লাস পানি করতে
হবে যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। পানির অভাবও মাইগ্রেইনের ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন