তিনি বলেছেন, “আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি যে আওয়ামী লীগের
নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই।
“ভুতের মুখে রাম রাম! আপনারা (আওয়ামী লীগ) তো দেশের গণতন্ত্রই
খেয়ে ফেলেছেন, মানুষের অধিকারগুলো খেয়ে ফেলেছেন। আর অন্যের গণতন্ত্র দেখে বেড়াচ্ছেন।”
সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
ফখরুল দাবি করেন, “বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র আছে বলেই তো বিএনপি
এখন পর্যন্ত এত অটুট আছে, একেবারে সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে।”
বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত
মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলটিতে গণতন্ত্রহীনতার কথা
বলেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো নিয়ে ফখরুল বলেন,
“আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলে আছেন, কোথাও যাওয়ার কোনো সমস্যা তো হয়নি।
“একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি একটা বৃহৎ দল। এই
ধরনের উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে ছোট-খাটো দুই-একটা ঘটনা কোনো ঘটনাই নয়।
এটাকে এত বড় করে যারা দেখছেন, তারা আমার মনে হয় ঠিকভাবে দেখছেন না।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উনার (হাফিজ উদ্দিন আহমেদ)
বিষয়ে আমরা কি পাল্টা কিছু বলেছি? উনার বক্তব্যে উনি যা বলেছেন, তা আমি দেখেছি। এখন
পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভারতে ২২ জন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা
ওপেন চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধীকে। কই তারা তো কেউ বহিষ্কার হননি। দ্যাট ইজ দ্য প্রাকটিস
অব ডেমোক্রেটিক পার্টি। কখনও হবে, কখনও হবে না- এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথার কোনো কারণ
নেই।”
জবাব দিলেন হাফিজ, ‘তোষামোদ’ ছাড়ার আহ্বান
হাফিজ উদ্দিনের লিখিত জবাবে বিভিন্ন অভিযোগ ও সুপারিশ
ছিল।
সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা
এখনও আলোচনা করিনি এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার আগেই আপনারা এমন লাফালাফি করছেন,
মনে হয় যেন সব কিছু চলে যাচ্ছে, এটাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে।”
তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা বলেন, “গণতন্ত্র তো ধ্বংস করেই ফেলেছে
আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বিষয়ে কিন্তু একটা কথাও গণমাধ্যমের কোথাও বলা হয় না, কোথাও দেখি
না।
“তারা (আওয়ামী লীগ) যখন প্রেস কনফারেন্স করেন, তাদেরকে কি
একবারও জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কেন এটা করলেন? দেশে এমন একটা ত্রাসের বা ভয়ের পরিবেশে
তৈরি করেছে, আপনারা যারা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চান, তারা করতে পারছেন না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) মেজর হাফিজের বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে
বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়ার মামলা করেছে। একটা নয়, ১০টা মামলা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের
মুখে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না।
“কোন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা সম্মান দিয়েছেন? তারা কি জিয়াউর
রহমানকে সম্মান দিয়েছেন? তারা কি তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবকে সম্মান দিয়েছেন? তারা দেননি।
তারা কি এমএজি ওসমানী (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক) এর নাম একবারও স্মরণ করেন?
এ কে খোন্দকার সাহেবকে বের করে দিয়েছেন, এখন উনি মুখ-বধির হয়ে গেছেন, একেবারে কথা বলা
বন্ধ, চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে উনার। এটা আমি কয়েকটা বললাম।”
ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের
একজন। কারণ উনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে যেদিন জিয়াউর রহমান সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা
দেন তারপর থেকে উনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দুইটা শিশুকে নিয়ে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন।
তারপরে কারা্ভোগ করেছেন এখনও।”
৪২ নাগরিককে ‘সাধুবাদ’ বিএনপির
নির্বাচন
কমিশনের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ তুলে ধরে তার বিচারে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ নাগরিকের চিঠি
দেওয়াকে সাধুবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ
ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যে, এত দিন পরে তারা জনগণের যে মূল কথা, সেটা নিয়ে এসেছেন, কথা
বলেছেন। তাদের যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব তারা পালন করেছেন।
“আমি মনে করি, এটাকে সমস্ত বুদ্ধিজীবী যারা আছেন তাদের সমর্থন
করা উচিত। ইটস নট ফর বিএনপি, নট ফর পলিটিক্যাল পার্টি। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য
প্রয়োজন।”
ইসির ‘গুরুতর অসদাচরণ’, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি ৪২ নাগরিকের
বিশিষ্টজনদের অভিযোগ ভিত্তিহীন: ইসি শাহাদাত
ওই বিবৃতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি
আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “চোর কি কখনও স্বীকার করে যে আমি চুরি করেছি।”
৪২ নাগরিকের দেওয়া বিবৃতির খসড়া বিএনপির তৈরি করা- তথ্যমন্ত্রীর
এই বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, “যারা বিবৃতি দিয়েছেন, তারা একজনও বিএনপি করেন না।
বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে তারা বিএনপির সমালোচনা করেছেন।
“প্রকৃত সত্য যখনই সামনে আসে এবং জনগণ যখন সত্য কথা বলতে
চায়, নাগরিকরা সত্য কথা বলতে চায়, তখনই আপনারা তাদের বিএনপি বানিয়ে ফেলেন। এটা হচ্ছে
গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আরেক জঘন্যতম কৌশল।”