শনিবার র পীরগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর
ইউনিয়নের ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান লিখিতভাবে বিচার চেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক
ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম কাছে
অভিযোগ দেন।
আহত সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের
ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের কালুপীর
বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান লিখিত ওই
অভিযোগে লেখেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসমাগম ঠেকাতে শুক্রবার বিকেল ৫টার
দিকে পীরগঞ্জ থানার এসআই রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স কালুপীর বাজারে আসে। এ সময় ছয়জনসহ
আমি গ্রাম্য পুলিশ নিয়ে কালুপীর বাজারে উপস্থিত হই। এরপর থানা পুলিশ, গ্রাম্য পুলিশসহ
আমরা কালুপীর বাজারে জনসমাগম ভণ্ডুল করার কাজ করি এবং করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতে মানুষকে
সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।’
অভিযোগে আরও লেখা হয়, ‘সন্ধ্যায় কালুপীর
বাজারে জনসমাগম ভণ্ডুলের কাজ করার সময় পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল
ইসলাম তার গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হন। এ সময় আমি ভূমি অফিসারকে চিনতে পেরে সালাম দিই। ভূমি
অফিসার সালাম গ্রহণ না করে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভূমি
অফিসারের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ভূমি
অফিসারকে জানায় আমি একজন জনপ্রতিনিধি; এটি শোনার পর ভূমি অফিসার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে
বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।’
পরে পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা ভূমি
অফিসার তরিকুল ইসলামের হাত থেকে আমায় রক্ষা করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ভর্তি করে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
তবে শনিবার সন্ধ্যায় পীরগঞ্জ ভুমি
অফিসে মীমাংসার জন্য বৈঠক বসে। পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, সহকারী
কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল
হক বিপ্লব, সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মখলেসুর রহমান, ৫নম্বর ওয়ার্ডের
ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান, সৈয়দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলমসহ গণ্যমান্য
ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানানো হয়েছে।
ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসিল্যান্ড আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, প্রকাশ্যে
মারপিট করেছেন। এর সঠিক বিচার চেয়েছিলাম। মীমাংসায় এসিল্যান্ড তার ভুল স্বীকার করেছেন।
এ সময় আমার কাছ থেকে একটি কাগজে লিখিত নেওয়া হয়েছে যে ‘এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
একরামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শুনেছি এসিল্যান্ড স্যার আমার ইউপি
সদস্যকে গালিগালাজ করে মারপিট করেছেন। উনি যদি এ কাজ করে থাকেন তাহলে ঠিক করেননি।
“ইউপি সদস্য ভুল করলে তাকে সচেতন
করতে পারতেন। তা না করে গালিগালাজ-মারপিট এটা ঠিক হয়নি।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী কমিশনারের
(ভূমি)একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি শুনেছিলাম ইউপি সদস্য গাজিউর রহমান
পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাজারে ফল খাচ্ছিলেন। এ সময় এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে উপস্থিত
হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। এতে ইউপি সদস্য ও এসিল্যান্ডের বাকবিতণ্ডা হয়।
সেখানে কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।
কীভাবে মীমাংসা করা হলো এ প্রশ্নের
ইউএনও বলেন, “উভয় পক্ষ কেউ কাউকে চিনতেন না। এ কারণে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
মীমাংসায় দু’পক্ষই লিখিত দিয়েছেন যে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এবং এরপর থেকে
এক হয়ে কাজ করবেন।
ইউপি সদস্যের সাথে এসিল্যান্ডের এমন
আচরণ আপনি কীভাবে দেখেন এমন প্রশ্নে ইউএনও রেজাউল করিম বলেন, “এ ধরনের আচরণ কারও কাছে
কাম্য নয়। পরবর্তী থেকে এ ধরনের খারাপ আচরণ আর কেউ যেন না করে সেজন্য তিনি সজাগ থাকবেন
এবং কেউ যদি এমন আচরণ করে তাহলে ব্যবস্থা নেবেন।
অন্যদিকে, যশোরের মণিরামপুরে মাস্ক না পরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এক
সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ‘নিগ্রহের’ শিকার হন বয়স্ক চার দরিদ্র ব্যক্তি। এ ঘটনা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। সেবক হিসেবে কাজ
করার পরামর্শের সঙ্গে হুঁশিয়ার করা হয়।