বুধবার
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে
তুরস্ক সরকারের এই আগ্রহের কথা তিনি তুলে ধরেন।
বৈঠক
শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশে বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন
করার লক্ষ্য ঠিক করেছি। গত বছর বাংলাদেশে আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার।”
তিনি
বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য না কমায় তারা
‘খুশি’।
“এ
কারণে আমরা আশাবদী, অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারব।”
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে সাবুসোলু
বলেন, “আমি আমাদের সামরিক সরঞ্জামের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোকপাত করেছি। এক্ষেত্রে
বিশ্বে প্রথম সারিতে আছি আমরা।
“প্রতিযোগিতামূলক
দাম এবং কোনো ধরনের পূর্বশর্ত নাই। আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ এই সুযোগের ব্যবহার করবে।”
সামরিক
সহযোগিতা বিষয়ে এক প্রশ্নে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি
হস্তান্তরের মাধ্যমে কাজ করে থাকে তুরস্ক। এখন আমরা যা উৎপাদন করছি তার ৭০ শতাংশের
বেশি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমরা এক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি।
“আমরা
আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও প্রযুক্তি ভাগাভাগি করি। আমরা বাংলাদেশসহ অন্যদের সঙ্গেও
এ প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে নিতে রাজি।”
তিনি আরও বলেন, “এশিয়ায় তুরস্কের যে নতুন উদ্যোগ, তাতে বাংলাদেশ হবে গুরুত্বপূর্ণ
অংশীদার। এখানে আছে বিস্তৃত বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সুযোগ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে সহায়তাসহ
অন্যান্য বিষয়। আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পাশে থাকার
আশ্বাস দেন মেলবুৎ সাবুসোলু।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় আমি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু
এ বোঝা অবশ্যই সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে।
”ঝুঁকিতে থাকা এই লোকদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে হবে। পরিবেশ তৈরি
করে সম্মানজনকভাবে তাদের সেখানে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “রাজনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ
ও দুই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, করোনাভাইরাস মোকাবেলা, বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতাসহ
আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দিক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেছি।”
বুধবার বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় তুরস্কের নতুন
দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবুসোলু।
গত সেপ্টেম্বরে আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন ভবন উদ্বোধন করেছিলেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ভবন উদ্বোধনের ধারাবাহিকতায় ঢাকায় তুরস্কের
দূতাবাস ভবন উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এই দুই আয়োজন আমাদের চমৎকার সম্পর্ককে
আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।”
যথাযোগ্য সময়ে তুরস্কের আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর এবং ঢাকায় কামাল আতাতুর্কের
ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মোমেন।
দুই
দিনের সফরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু।
বুধবার
দুপুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এর আগে সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা
নিবেদন করেন সাবুসোলু। ঢাকায় ব্যস্ততম দিন পার করে সন্ধ্যায় তুরস্কের পথে রওনা হন তিনি।