দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত
মার্চ মাস থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা এলে
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও
আবাসিক হলগুলো বন্ধই রেখেছে।
বেশ কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন প্রকাশ
করার পর শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা
দেবে, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে।
শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও আবাসিক খুলে
দেওয়ার দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও তাদের সমর্থন করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পরীক্ষার্থীদের জন্য খোলার
দাবিতে ছাত্রলীগ, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের
সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি জানায়।
উপাচার্য বলেন, “প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে হল
খুলতে জাতীয় সিদ্ধান্ত লাগবে। শিক্ষার্থীরা হল খোলার দাবি জানালেও বিচ্ছিন্নভাবে আমরা
সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
“১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বন্ধের ঘোষণা রয়েছে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”
২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের
পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তার আগে আবাসিক হল খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসে
মিছিল-সমাবেশের পর স্মারকলিপি নিয়ে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
পরে চার দফা দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে স্মারকলিপি দেয় জোটের নেতারা। এসময় ছাত্র
ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ
সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের দাবির মধ্যে রয়েছে- ছাত্রলীগের
দখলদারিত্ব মুক্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অবিলম্বে হল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে
হবে, বেতন ফি মওকুফসহ অতিরিক্ত হারে সেশন ফি ও অন্যান্য ফি এবং জরিমানা নেওয়া বন্ধ
করতে হবে, পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে
হবে।
শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে
পরীক্ষা নিতে গত ১৩ ডিসেম্বর উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
কিন্তু সেই দাবিতে সাড়া না দেখে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত
চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা উপাচার্যের সঙ্গে
দেখা করতে যান।
শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে
উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন “তবে এই মহামারীতে শিক্ষার্থীদের এই কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহমত জানিয়ে তিনি
বলেন, “আমার এর সাথে দ্বিমত নেই। কিন্তু বিষয়টি হল এটি যদি স্বাভাবিক বন্ধ হত, তাহলে
আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। এই বন্ধটি হল প্যানডেমিক উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বন্ধ।
“এখানে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে বড় আকারে ঝুঁকি
সম্ভাবনা আছে। কেউ কেউ মামলাও করতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবেও কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে
যে, জাতীয় সিদ্ধান্ত একরকম, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত আরেক রকম।”
তিনি বলেন, “পুরো জাতিকে আমরা অন্যদিকে নিয়ে
যেতে পারি না। কেউ এটাকে বলবে ট্রাম্পের মতো আচরণ। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে হল খুলতে
জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত লাগবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত লাগবে।”
ছাত্রলীগ নেতারা অল্প সময়ে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের
বাসা ভাড়ার সমস্যা ও নারী শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা তুলে ধরলে উপাচার্য বলেন, “নারী
শিক্ষার্থীদের জন্য একটু অসুবিধা হবে। তবে আমরা আমাদের সহকর্মীদের বলেছি, শিক্ষার্থীদের
সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাদের মতামত নিয়ে পরীক্ষা নিতে। যাদের খুব সমস্যা,
তাদের বিষয়ে সহযোগিতা করতে বলেছি।”
পরে ছাত্রলীগ নেতারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার
দাবি জানিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেন। উপাচার্য তাদের দাবিকে স্বাগত জানিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে তা আলোচনার আশ্বাস দেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলার দাবিতে
বুধবার সকাল ১১টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত
সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।